Skip to content
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো
পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ, বাংলাদেশ।
৯ অক্টোবর ২০১৩ সাল। সময়ঃ রাত ১০ ঘটিকা। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হতে ড্রাগন এয়ার যোগে হংকং রওয়ানা হলাম। উদ্দেশ্য, বিশ^বৌদ্ধদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ঞযব ইঁফফযধ’ং খরমযঃ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ ইখখঅ এর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় সভা এবং বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের ৫ম বৈঠকে যোগদান করা। লেখাটির সূচনাতে মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইখখঅ এর সাথে আমার যোগাযোগের পূর্বসুত্র এখানে তুলে ধরার লোভ সংবরণ করা সম্ভব হল না। সেটা ১৯৯৭ সালের ১ মার্চের কথা। আমার জীবনের সকল শ্রম আর সাধনার বিনিময়ে গড়ে তোলা মোনঘর ও বনফুল চিলড্রেন হোমস এর যাবতীয় দায়দায়িত্ব ট্রানজিশন কমিটির হাতে ন্যস্ত করে রাঙ্গামাটিস্থ আনন্দ বিহারে অবসর জীবন যাপন করতে চলে গেলাম। তখন আমার জীবন কাটছিল জীবনের নিয়মেই। আমার সেই নিস্তরঙ্গ সময়ে অগ্রজ ভদন্ত বিমল তিষ্য মহাথেরো মহোদয় মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচালিত ইঁফফযধ’ং খরমযঃ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ (ইখখঅ) এর সাথে যোগাযোগের সূত্র ধরিয়ে দিয়ে আমার জীবনে নতুন তরঙ্গ তথা নতুন মাত্রা যোগ করার অবকাশ দিয়ে আমাকে চিরকৃতার্থ করলেন। অতঃপর অঃঃধফববঢ়ধ ঋড়ঁহফধঃরড়হ এর যাত্রা শুরু হল। অঃঃধফববঢ়ধ ঋড়ঁহফধঃরড়হ ১৯৯৮ সালে ইখওঅ ঈঐঞ ঈযধঢ়ঃবৎ ইধহমষধফবংয এর মর্যাদা পেল। বস্তুত তখন থেকেই ইখওঅ এর সদর দপ্তরের সাথে আমার রাখী বন্ধনের শুরু হল। এবারের বৈঠকটি হল ইখওঅ এর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় বৈঠক ও বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের ৫ম বৈঠক। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ইখওঅ এর হংকং চ্যাপ্টার ও মহাচীনের ুরীরহম এর উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর উদ্যোগে। আমার আকাশযান ড্রাগন এয়ার যথারীতি রাত ১০ ঘটিকার সময় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করে ঘন্টা খানেক চলার পর কাঠমন্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করলো। নেপালের কিছু যাত্রী নেমে গেলেও অনেক যাত্রী বিমানে আরোহন করলো। ঘন্টা দেড়েক পর নেপাল থেকে হংকং পর্যন্ত টানা আকাশযাত্রার শুরু হল। স্থানীয় সময় সকাল ৭ ঘটিকায় হংকং এর ঈযধঢ় খধঢ় কড়শ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অরৎঢ়ড়ৎঃ এ আমাদের আকাশযান নিরাপদে অবতরণ করলো।
ইখওঅ এর হংকং চ্যাপ্টার থেকে আমাকে নিতে এসেছে। আমি ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলংকার প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দিতে এসেছেন। সকল আমন্ত্রিত প্রতিনিধি এসে পৌছলে সকাল ৯ ঘটিকার দিকে আমরা লিমুজিন বাসে চড়ে বসলাম। বাস মহাসম্মেলন স্থলের অভিমুখে যাত্রা শুরু করলো। দুুপুর ১.০০ ঘটিকা নাগাদ আমরা আমাদের গন্তব্য মহাসম্মেলন স্থলের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারলাম। সম্মেলনস্থলের পাশর্^বর্তী একটি হোটেলে আমিসহ আগত অতিথিদেরকে মধ্যাহ্ন ভোজন করানো হলো। মধ্যাহ্ন ভোজন পর্ব শেষ হতে বাজলো দুপুর আড়াইটা। অতঃপর মহাসম্মেলন স্থলে যাবার জন্য আমরা আবার বাসে চড়ে বসলাম। অপরাহ্ন ৩ ঘটিকার সময় ইখওঅ এর হংকং চ্যাপ্টারের প্রধান কার্যালয়ে আমরা চার দেশের প্রতিনিধিরা গিয়ে পৌঁছলাম। যথারীতি নাম রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হল এবং সম্পন্নও হল খুব তাড়াতাড়ি। ঙঁঃফড়ড়ৎ এধৎফবহ এ আমাদের জন্য ডবষপড়সরহম ইধহয়ঁবঃ শুরু হলো হংকং সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ। অতঃপর পরবর্তী সভার পূর্ব আলোচনা শুরু হলো। এই সভাকক্ষটি ১৫/এফ ফ্লোরে অবস্থিত। প্রাক আলোচনা পর্ব শেষ হলো রাত ৯ ঘটিকায়। এবার রাতের ঘুমের পালা। চলে এলাম রাত যাপনের জন্য নির্ধারিত হোটেলে। আগে থেকেই সকলের জন্য হোটেলে রুম বুক করা ছিল। হোটেলে দুই বেডের কক্ষে আমি একা। আকাশযানের সিডিউল হেরফের হওয়ার কারণে ব্যাংকক থেকে ভদন্ত বিশুদ্ধানন্দ থেরো বৈঠকে যোগদান করতে পারলো না বিধায় দু’জনের কক্ষে আমি একাই রাত্রী যাপন করলাম। দীর্ঘ আকাশ ভ্রমণে নির্ঘুম থাকার কারণে হোটেলের নির্মল বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই তলিয়ে গেলাম ঘুমের অতলে। দীর্ঘ ক্লান্তির পর সে এক সুখময় শান্তি। ঐড়হম কড়হম ওচইঝ এর সদর দপ্তরটি ছিল জঙঙগ- উ ১৬/ঋ ইওখখওঙঘ ঈঊঘঞজঊ ঞঙডঊজ অ, ১ ডঅঘএ কডঙঘএ জঙঅউ কঙডখঙঙঘ ইঅণ কঙডখঙঙঘ. ইটউউঐঅঝ খওএঐঞ ওঘঞখ অঝঝঙ, ঐঙঘএ কঙঘএ এর অফিসটিও একই অবস্থানে অবস্থিত বলে ধারণা। ইওখখওঙঘ ঈঊঘঞজঊ ঞঙডঊজ টি ৩২ তলা উচ্চতা সম্পন্ন। এ টাওয়ারের ১৫তম ফ্লোরে অফিস ও ১৬তম ফ্লোরে বুদ্ধমূর্তিটি সংরক্ষিত। এর ১৬তম ফ্লোরেই বুদ্ধের সম্মুখে বর্ণাঢ্য উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জানলাম যে, ইওখখওঙঘ ঈঊঘঞজঊ ঞঙডঊজ এ আরও অনেক অনেক নাম করা প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট অফিসও চালু রয়েছে। এর ব্যবস্থাপনা এতটাই অত্যাধুনিক যে, প্রত্যেকটি অফিস এর জন্য আলাদা আলাদাভাবে লিফট সংযোজিত। ঐড়হম কড়হম ওচইঝ ও ইখওঅ ঐবধফ ছঁধৎঃবৎ এর জন্য আলাদা দু’টি লিফট সার্বক্ষণিক উঠা নামা করছে।
নানা আয়োজন আর রুটিন ওয়ার্কের মধ্য দিয়ে কী ভাবে যেন সময় তথা ১০ অক্টোবর পেরিয়ে গেলো। আজ ১১ অক্টোবর। সকাল সাতটা নাগাদ সংশ্লিষ্ট হোটেলেই প্রাতঃরাশ পরিবেশিত হলো। প্রাতঃরাশের পর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের লক্ষে শুরু হলো লিমুজিন বাসে চড়ে বসার দৌঁড়ঝাঁপ। গধরহ ঝযৎরহব এর ১৬তম ফ্লোরে মনোমুগ্ধকর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হলো সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ। মনোরম সৌকর্যমন্ডিত আসনে উপবিষ্ট করুণাঘন তথাগত বুদ্ধের সুবৃহৎ মূর্তির সম্মুখেই সহ¯্রাধিক প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের চিত্তাকর্ষক আয়োজন। তথায় ভিক্ষু, ভিক্ষুনী, উপাসক এবং উপাসিকা সকলেই জুতা, মোজা পরিহিত ও চেয়ারে উপবিষ্ট অবস্থায় করুণাঘন বুদ্ধের পাদমূলে প্রার্থনা ও পূজা নিবেদন সারলেন। বাংলাদেশের অতিকট্টর, দান শীল-ভাবনা ও শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার সাধনায় ব্যাপৃত থেকে ধারণ, মনন ও সর্বপ্রযতœ অনুশীলনের মাধ্যমে পারমিতা উৎসর্জনের পরিবর্তে অতিসহজ পদ্ধতিতে অপরের কাঁধে ভর করে হলেও নির্বাণ লাভের প্রত্যাশায় আত্মবিসর্জিত জনগণের কাছে এরূপ জুতা-মোজা পরিহিত অবস্থায় বুদ্ধ বন্দনা ও পূজা নিবেদন চরম অধর্মের কাজ হিসেবে নিন্দিত হতো। ধর্ম গেলো, পবিত্রতা গেলো, ধর্মবোধ অন্তর্হিত হলো বলে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতো। তথাকথিত একশ্রেণির ভিক্ষুদেরকে নির্মম সমালোচনায় তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না। বর্ণাঢ্য উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের সফল সমাপ্তির পর সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ দেওয়া হলো মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতি। দুপুর দেড়টা থেকে ৩.০০টা পর্যন্ত গড়ঃরড়হ উরংপঁংংরড়হ । অতঃপর চা বিরতি। অপরাহ্ন সাড়ে তিনটা থেকে একেবারে ৫টা পর্যন্ত আবারও গড়ঃরড়হ উরংপঁংংরড়হ । স্থানীয় সময় অনুযায়ী সাড়ে পাঁচটায় পরিবেশন করা হলো রাতের খাবার। অতঃপর ঘরমযঃ খরমযঃং ড়ভ ঐড়হম কড়হম দেখার জন্য বাসে চড়ে বসা হল। হংকং এর রাত্রীকালীন সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণের পর রাত ১১ টার দিকে হোটেলে ফিরে হট শাওয়ারের পর ডুবে গেলাম ঘুমের অতল দেশে। আজ ১২ অক্টোবর, শনিবার। হোটেলে প্রাতঃরাশ সারার পর গধরহষধহফ ঈযরহধ এর ঘধহলরহম যাওয়ার উদ্দেশ্যে হংকং এর ঈযধঢ় খধঢ় কড়শ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের অভিমুখে রওয়ানা দিলাম। গধরহষধহফ ঈযধরহধ এর ভিসা না থাকায় অনেকেই ঘধহলরহ যেতে পারলো না। স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকাল ১০.৪০ মিনিটে আমাদের আকাশযান ড্রাগন এয়ার ঘধহলরহম বিমান বন্দরে অবতরণ করে। পর পর বেশ কয়েকটি বিমানে চড়ে আগত সব প্রতিনিধিরা ঘধহলরহম বিমান বন্দরের লাউঞ্জে সমবেত হলে প্রায় ১৫টি লিমুজিন বাস আমাদেরকে নিয়ে শুরু করলো চিত্তাকর্ষক ঈরঃু ঞড়ঁৎ ড়ভ ঘধহলরহম । আমাদেরকে নেওয়া হলো চীনাদের জাতির পিতার সমাধি স্থলে। সমাধিস্থলের বেশ দূরে আমাদেরকে বাস থেকে নামিয়ে জোড়া লাগানো টয় ট্রেন এর মতো এক ধরণের যন্ত্রযানে করে সমাধিস্থলে নিয়ে পৌঁছাল। অসংখ্য দর্শনার্থী। অনেকের কাছে জাতির পিতার নাম জিজ্ঞাসা করলাম। কিন্তু কোন চীনা ভদ্রলোকের মুখে উচ্চারিত জাতির পিতার নামের মর্মার্থ বুঝা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পরে একজন ইংরেজি জানা লোকের কাছে জিজ্ঞাসা করে ‘সান ইয়াৎসেনের’ নাম জানতে পারলাম। মহামানব ‘সান ইয়াৎসেন’কে গণচীন তাঁদের জাতির পিতা হিসেবে ¯^ীকৃতি দিয়ে শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত করার প্রয়াস পেয়েছে। চীনের অধিবাসীরা তাঁদের জাতির পিতা সান ইয়াৎসেনকে পরম মমতায় ¯^দেশী-বিদেশী সকলের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের স্মৃতিতীর্থ হিসেবে বিশ^বাসীর কাছে তুলে ধরার পরম পরাকাষ্টা প্রদর্শন করছে। জাতির পিতার স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের পর আমরা ঘধহলরহম এর উধ ঔঁব ঞবহঢ়ষব এর অভিমুখে রওয়ানা দিলাম। বিকেল ৫টার দিকে আমাদের গাড়িটি উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর সুন্দরভাবে সজ্জিত প্রধান ফটকে এসে পেীঁছলো। প্রধান ফটকে নেমে আবারও ঞবসঢ়ষব এর নিজ¯^ বিশেষ ধরনের টয় গাড়িতে তুলে আমাদেরকে গধরহ ঝযৎরহব এর প্রশস্ত করিডোরে নিয়ে নামিয়ে দেয়। এখানে আমাদেরকে উধ ঔঁব ঞবসঢ়ষব এর অফিস থেকে থাকার জন্য নির্ধারিত হোটেলের নিজ নিজ রুমের চাবি সংগ্রহ করতে বলা হয়। আমরা তাই করলাম। চাবি সংগ্রহের কাজ শেষ হলে আমাদেরকে রাতের খাবারের জন্য উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর সুসজ্জিত ও সুবিশাল ডাইনিয় হলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের ভদ্র সমাজে খুবই পরিচিত বুফে পদ্ধতিতে খাদ্য পরিবেশনা দেখে ভাল লাগলো। যার যা ইচ্ছে আর রুচি মোতাবেক পরিচিত ও অপরিচিত বহু প্রকারের খাদ্য সম্ভার থেকে নিজ নিজ প্লেটে পরিমান মতো খাদ্যবস্তু প্লেটে ধারন করে ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার পর্ব সুসম্পন্ন করা হলো। অনেক জনের একসাথে খাবারের সুন্দর সুবন্দোবস্ত চোখে পড়ার মতো। এক টুকরো খাদ্য কণাও কেউ ফেলে দেয়নি। আহার পর্ব সমাপ্তির পর প্রত্যেক প্লেটের উচ্ছিষ্ট নির্দিষ্ট পাত্রে নিক্ষেপ করে ব্যবহৃত প্লেটটি ¯^-উদ্যোগে পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে রেখে আসতে হবে। কোথাও কোন কোলাহল নেই। নেই নিয়মের কোন ব্যত্যয়। আহারের সময় পিত পতন নীরবতা যেন ধ্যানের একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আট শতাধিক মানুষের এক সঙ্গে একটি ডাইনিং হলে প্রাতঃরাশ, লাঞ্চ ও ডিনার পর্ব ধ্যান আর মৌন নীরবতা অবলম্বন করে সুসম্পন্ন হল। এটা সত্যিই নিয়মানুবর্তিতার এক বিরল উপস্থাপনা। বাস্তবতার নিরিখে মনে হলো- সম্মেলনে আগত প্রত্যেক প্রতিনিধিই যেন মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন এর প্রবর্তিত ঐঁসধহরংঃরপ ইঁফফযরংস এর প্রতি গভীর আস্তা ও ভালোবাসার অপ্রমেয় নির্য্যাস বিম্বিত করার পরাকাষ্টা দেখাতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি রাজ বনবিহারে আমার ¯^চক্ষে দেখা একটি পীড়াদায়ক ঘটনার বিবরণ এখানে তুলে ধরার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। এটা ১৯৯৮ সালের কোন এক দিনের ঘটনা। মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইঁফফযধ’ং খরমযঃ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ এর অর্থায়নে ২৫টি শরণার্থী পরিবারকে ২৫টি সিঙ্গার সেলাই মেশিন বিনামূল্যে বিতরণের লক্ষ্যে ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ রাঙ্গামাটি আনন্দ বিহারে আগমন করেছেন। সেলাই মেশিনসমূহ ২৫টি শরণার্থী পরিবারের সদস্যদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়ার জন্য সেদিন আনন্দ বিহারের পবিত্র প্রাঙ্গনে প্রতিথযশা সংসদ সদস্য বাবু উপেন্দ্র লাল চাকমাসহ রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠান পরিসমাপ্তির পর রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির একজন সম্মানীত সদস্য আমাকে ও ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ কে রাজবন বিহার পরিদর্শন ও তথায় তারপর দিন দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের আমন্ত্রণ জানান। আমরা উভয়ে সানন্দে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলাম। সেদিন রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে কোন একটি বড় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। আমি ও ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ সকাল আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় রাজবন বিহারের দেশনা হলে গিয়ে উপস্থিত হলাম।
শ্রদ্ধেয় বনভান্তে তখন হাজারো পূণ্যার্থীর উদ্দেশ্যে ধর্মদেশনা করছিলেন। আমাকে ও ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ কে সম্মেলনস্থলে ভিক্ষু সংঘের পাশে বসার আসন দেয়া হ’ল। যথারীতি শ্রদ্ধেয় বন ভান্তের ধর্মভাষণ শেষ হ’ল। অতঃপর দ্বিপ্রাহরিক ভোজন গ্রহণের পালা। যেখানে আমাদেরকে দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের লক্ষ্যে নেয়া হল সেখানে আমরা দু’জন ছাড়া আরও কমপক্ষে শতাধিক ভিক্ষু শ্রামনদের ভোজন গ্রহণের আসন বিন্যাস করা হয়েছে। প্রত্যেক ভিক্ষু-শ্রামণগনের সম্মুখে ৩টি বড় ট্রেতে করে কমপক্ষে ২৪ প্রকারের অন্ন-ব্যঞ্জন পরিপাটিভাবে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে। আর আমাদের দু’জনের সম্মুখে কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) প্রকারের অন্নব্যঞ্জন সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ যেহেতু বিদেশী এবং আমন্ত্রিত সম্মানীত অতিথি সেহেতু তাঁর সম্মুখে স্থুপীকৃত অন্নব্যঞ্জনের বহর আরও বেশি। যথারীতি ধ্যান মৌন অবস্থায় আহার পর্ব শুরু হ’ল। আমারও ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ এর সম্মুখে স্থুপীকৃত অন্নব্যঞ্জনের মধ্য থেকে পেটে ধারণক্ষম আহার্য্য প্লেটে নিয়ে আহার পর্ব সমাধা করলাম। অন্যান্য ভিক্ষুশ্রামনগণও আহার পর্ব শেষ করলেন। সকলের আহার পর্ব শেষ হলে ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ তাঁর সম্মুখে কেন ৫০ (পঞ্চাশ) মানুষের পরিমাণ খাদ্য পরিবেশিত হয়েছে- তা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। আরও জিজ্ঞাসা করলেন- যে সমস্ত সু¯^াদু খাদ্য ভোজ্য তাঁর সম্মুখে স্তুপাকার করে প্রদান করা হয়েছে এসব খাদ্য ভোজ্য কি করা হবে। যথারীতি এ বিষয়টি আমি আমার সম্মুখে বসা একজন ভিক্ষুর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম। ভিক্ষু আমাকে বললেন- ‘ভান্তে এসব উচ্ছিষ্ট খাদ্যভোজ্য কাপ্তাই লেইকে নিক্ষেপ করা হবে।’
দ্বিপ্রাহরিক আহার পর্ব সমাপ্তির পর আমরা ভিক্ষুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আনন্দ বিহারের পথে রওয়ানা দিলাম। অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ আমার সাথে একটি কথাও বললেন না। তাঁর মুখটা অনেকটা থম থমে। ভাবলাম ঠবহ. ইযরশংযঁহর ঈযঁবয গবহ এর কী হলো। তখন বনরূপা পেরিয়ে এসেছি হঠাৎ করে ঈযঁবয গবহ আমার দিকে ঠিরে আঙ্গুল উচিয়ে বললেন- ‘তোমরা যদি এভাবে সু¯^াদু খাদ্যভোজ্য অপচয় কর, এখন কি এমন গরীব বরং একটা সময় আসবে যখন এর থেকে আরও সহ¯্রগুণ গরীবত্ব তোমাদেরকে বরণ করতে হবে?।’ কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন- জানেন, আমাদের মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন একখন্ড ভাতের কণাও অপচয় না করার জন্য আমাদেরকে সদাসর্বদা সতর্ক থাকতে বলেন।
খাদ্য অপচয় একটি গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। এটি অ¯^ীকার করার কোন উপায় নেই। আমিও ব্যক্তিগতভাবে খাদ্য অপচয় পছন্দ করি না। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনে অগভীর চিন্তা চেতনার অধিকারী আতœঅহমিকায় পরিপূর্ণ ও নিজগুণে পরিতৃপ্ত ভিক্ষু শ্রামণের হুজুক, জনরব ও গুজব তাড়িত তথা গুজবে বিশ^াস ভাজন এবং অন্ধভক্তিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সাধারণ জনগণের মাঝে খাদ্য অপচয়ের বিষয়টি তুলে ধরা আমার মতো ভিক্ষুর বেলায় নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করার সামিল। তথাটি সবার মঙ্গলার্থে পীড়াদায়ক বিষয়টি এখানে উল্লেখ না করে উপেক্ষা করা সম্ভব হল না বিধায় দুঃখিত। পরামর্শ হিসেবে মাছ, মাংস, সবজী, তিক্ত, কষায় প্রভৃতি তরিতরকারীর ভান্ড আলাদা আলাদাভাবে সংগ্রহ ও সুসংরক্ষণ করে দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের সময় সমভাবে পরিমাণমত ভিক্ষু-শ্রামনের সমীপে পরিবেশিত হলে, অবশিষ্ট খাদ্য ভোজ্য সদ্ধর্মপ্রাণ দায়ক দায়িকাগণ গ্রহণ করলে খাদ্য অপচয় নিঃসন্দেহে কমবে বলে আমার দৃঢ় বিশ^াস। এ ব্যাপারে দায়কদায়িকাগণের গরহফংবঃ জরুরী।
বনবিহারের সু¯^াদু খাদ্য অপচয়ের এ নিন্দনীয় ও গর্হিত বিষয়টি সাধারণ জনগণের মাঝে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার লক্ষে বিশিষ্ট চাকমা কবি ও সাহিত্যিক আমার বন্ধু বাবু সুগত চাকমা (ননাধন) অন্তত আজ থেকে দু’আড়াই যুগ আগে একটি চাকমা কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটির অংশ বিশেষ হল যদ্দুর সম্ভব নি¤œরূপঃ
‘মানজ্যে কুড়তন আলুর গাত ভাবানুবাদ: লোকে গর্তের পর গর্ত খুড়ে খাদ্যাভাবে ইয়েয় ফেলদন পানিত ভাত। অরণ্যে জংলী আলু খুজছে আর এদিকে বন ভিক্ষুরা চল বাপ-ভেই চল যেই, সু¯^াদু খাদ্য কাপ্তাই লেইকে ফেলছে। চল ভাই- বন্ধুচল বেক্কুনে মিলি ইয়ে অই।’ যেই তখন সকলে মিলে বনভিক্ষু হই।
এখানে ইয়ে মানে বন বিহারে ভিক্ষু হওয়া। ১৯৭৪ সাল। তখন সারা বাংলাদেশ ব্যাপী নিরন্ন মানুষের হাহাকার চলছিল। ¯^ভাবতই কবি, সাহিত্যিকরা একটু দূরদর্শী হন। এটি অ¯^ীকার করার কোনো উপায় নেই। বন্ধু আবেগ তাড়িত হয়ে এ কবিতাটি লিখে ফেলেছেন। তখন তিনি এমএসসি পাশ করে বেকার ঘুরছিলেন। চাকরি-বাকরির খোঁজখবর করছিলেন। মিশুক, দিলখোলা আর বাউন্ডুলে ¯^ভাবের মানুষ। অবস্থাটা অনেকটা যেখানে রাত সেখানে কাত। কিন্তু বন বিহারের বিরুদ্ধে এ তীর্যক কবিতাটি লেখার পর তাঁর অবাধ বিচরণ ও নেমতন্ন প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল বলে শোনা গেছে। জানি না- এ বিষয়টি তুলে ধরায় বন্ধু আমাকে কিছু মনে করবেন কি না। কিন্তু ঘটনাটি সবৈব সত্য বলে জানি। এমনকি তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার অভিসন্ধিও কেউ কেউ নিয়েছিল বলে শুনেছি। যাক। অক্টোবরের ১২ তারিখ। রাত্রে যে হোটেলে আমি রাত্রী যাপন করলাম সে হোটেলটির নাম হল খড়হম ঢরহম ডধহ ঐড়ঃবষ. সকাল ৭ (সাত) ঘটিকার সময় খড়হম ঢরহম ডধহ হোটেলেই আমরা যাঁরা সেখানে ছিলাম সকলেই প্রাতঃরাশ সারলাম। সকাল ৮.০০ ঘটিকার সময় উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর অভিমুখে লিমুজিন বাস যোগে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। সকাল সাড়ে আটটার দিকে আমাদের বাসটি উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর মনোরমভাবে সুসজ্জিত প্রধান ফটকে গিয়ে পৌঁছলো। বাস থেকে নামার পর আমাদেরকে নানা আয়োজনে অতি সম্মানজনক ভাবে গ্রহণ করা হলো। আমাদের দলটিই বোধ হয় সর্ব প্রথম প্রধান ফটকে পৌঁছেছে বিধায় বাদ্যবাজনা, আতসবাজি সহযোগে সমাগত প্রতিনিধিদেরকে সাদরে বরণ করে নেওয়া হল। পাশর্^বর্তী বিভিন্ন হোটেল থেকে আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা দল বেঁধে একের পর এক প্রধান ফটকে এসে পৌঁছাতে ৯.৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় নিল। এর মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক প্রতিনিধি উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর সম্মুখস্থ সুবিশাল ময়দানে জড়ো হলাম। অতঃপর শুরু হল ঞড়ঁৎ ড়ভ উধ লঁব ঞবসঢ়ষব. প্রতিটি গ্রæফের সম্মুখে ওহফরপধঃরহম পতাকা হাতে ঞড়ঁৎ এঁরফব একজন চীনা যুবক। উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর প্রতিটি ডরহমং বা শাখা পরিদর্শন করতে করতে সকাল ১১.০০ টার দিকে সুবিশাল বুদ্ধের সম্মুখে প্রার্থনা ও পূজা নিবেদনের লক্ষে ঞবসঢ়ষব এর গধরহ ঝযৎরহব বিল্ডিং এর অভ্যন্তরে এসে পৌঁছলাম। উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর গধরহ ঝযরৎহব বিল্ডিং এ রক্ষিত বুদ্ধ প্রতিমূর্তিটি মায়ানমার সরকার কর্তৃক প্রদত্ত। শে^তপ্রস্তরের সুবিশাল বুদ্ধ প্রতিমূর্তি। অবলোকন করলেই শ্রদ্ধায় মাথা ¯^য়ংক্রিয়ভাবে নুইয়ে পড়ে। আমরা হাজার খানেক বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি সেই সুবিশাল বুদ্ধ প্রতি মূর্তির সম্মুখে যন্ডায়মান। চীনা ভাষায় বুদ্ধ-ধর্ম ও সংঘ বন্দনা উচ্চারিত হল। আমরা সকলেই তাঁদের দেখাদেখি মাথা নোয়ালাম। নানা মন্ত্র উচ্চারিত হল। ঐ মন্ত্রের একবিন্দুও বোধগম্য হল না আমার। আমি আমার মতো বেশ কয়েকটি সূত্রসহ বুদ্ধের নয়গুণ, ধর্মের ছয়গুণ ও সংঘের নয়গুণ সহ মৈত্রী ভাবনা মনে মনে আওড়ালাম। উল্লেখ্য, বুদ্ধের সুবিশাল প্রতিমূর্তিকে যেখানে রাখা হয়েছে সেই গধরহ ঝযৎরহব বিল্ডিং এ ঢোকার সময় আমরা কেউ কিন্তু জুতা মোজা খুলিনি। জুতা মোজা সমেত তিনবার হাঁটু মুড়ে বন্দনা করা ছাড়া সব কাজই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সম্পাদন করা হল।
এরপর দুপুর ১২ টার দিকে উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর সুবিশাল ও সুসজ্জিত ডাইনিং হলে আমাদের জন্য প্রস্তুতকৃত বুফে পদ্ধতিতে দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হল। দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হল জবমরড়হধষ ঋবষষড়ংিযরঢ় ধহফ ঝযধৎরহম এর উপর প্রাণবন্ত আলোচনা। এ আলোচনানুষ্ঠান চললো একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর মধ্যে অবশ্য চা বিরতি ছিল। সাড়ে চারটার দিকে আমাদের সকলের বহু প্রত্যাশিত মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন সম্মেলন স্থলে এসে আমাদের সকলের সাথে কুশল বিনিময় করলেন্ হুইল চেয়ারে মঞ্চে উঠে চীনা ভাষায় নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখলেন। সৌভাগ্যবশত আমাকে একটা ঞৎধহংষধঃরড়হ গধপযরহব দেওয়া হয়েছিল হংকং এ। মহাচার্যের পুরো ভাষণটি তখনই ইংরেজিতে অনুবাদ করে শোনানো হচ্ছিল ঞৎধহংষধঃরড়হ মেশিনটির সহায়তায় তা হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব হল। সম্মেলনের অপরাপর নিত্য নৈমিত্তিক দিক নির্দেশনা শোনার ব্যাপারেও এ ঞৎধহংষধঃরড়হ গধপযরহব টি আমাকে প্রভূত উপকার সাধন করেছে। নাতিদীর্ঘ ভাষণের পর শুরু হলো তাঁর উপস্থিতিতে ফটো সেশনের পালা। উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর গধরহ ঝযৎরহব বিল্ডিং এর সম্মুখস্থ বিশাল মাঠে আমরা সব প্রতিনিধি গিয়ে সমবেত হলাম। প্রধান প্রতিনিধিদেরকে সম্মুখ সারিতে চেয়ারে বসার জন্য ডাকা হল। আমিও একটি দেশের মুখ্য প্রতিনিধি হিসেবে সম্মুখ সারিতে স্থান পেলাম। আমার ক্যামেরা সেখানে ব্যবহার করার অনুমতি পায়নি। তবে ফটো সেশনের দু’টি কপি সম্মেলন সমাপ্তির দিন আমাকে দেয়া হয়েছিল বিনামূল্যে। অন্য প্রতিনিধিরাও সকলেই ফটো সেশনের ছবি এক কপি করে পেয়েছিলেন বলে মনে হয়। ফটো সেশনের পর উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর ডাইনিং হলে শুরু হলো ডিনার। ডিনারের সাথে সাথেই শুরু হলো বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আমেরিকা, কানাডা, তাইওয়ান, হংকং, ইউরোপ থেকে কমপক্ষে চার শতাধিক ইঁফফযধং খরমযঃ ওহংঃৎঁপৎরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ এর অভভরষরধঃবফ ঈযধঢ়ঃবৎ ্ ঝঁন-ঈযধঢ়ঃবৎ এর প্রতিনিধি এ মহাসম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন। গধরহষধহফ ঈযরহধ থেকেও চারশতাধিক প্রতিনিধি এসম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন। তাঁদেরই মিলিত উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নান্দনিক উপস্থাপনা সকলেই দারুণ আনন্দে উপভোগ করলাম। একবিন্দু ভাষা না বুঝলেও নাচ এবং অর্কেস্ট্রার ভাষা, তাল, লয় আমাদের বিমোহিত করলো। বাস্তবিক অর্থেই মনে হলো- এই সুরের মর্মার্থ ধারণের জন্য ভাষা কোনো শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয় না। এক্ষেত্রে ভাষা জানা থাকলে তো সোনার সোহাগা। এটাই তো সব কিছু পেরিয়ে আত্মিক মিলনের এক মহাবন্ধন যা দিয়ে মানুষ মানুষকে অনুভব করতে পারে। সেদিন চীনের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন খুবই উঁচু স্তরের সম্মাণিত কর্মকর্তা, নানজিং এর স্থানীয় প্রশাসনের এক ডজন কর্মকর্তা এই বর্ণাঢ্য ডিনারে যোগ দিতে এসেছেন। সেজন্য ডিনারে পরিবেশিত খাদ্যের মান থেকে শুর¤œ করে অপরাপর সাজ-সজ্জা ছিল খুবই পরিপাটি ও চিত্তাকর্ষক। প্রায় রাত দশটায় এ ডিনার পার্টি উপলক্ষে আয়োজিত যাবতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি শেষ হল। অতঃপর আগামী দিনের দিক নির্দেশনা। আমাদের দল রাত সাড়ে দশটার দিকে খড়হম ঢরহম ডধহ হোটেলে ফিরে এলে আমরা যার যার কক্ষে চলে গেলাম। হোটেল কক্ষে ফিরে যথারীতি হট শাওয়ারে তৃপ্তি দায়ক ¯œান সমাপন করে রাত ১১ টার দিকে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন ছিল ১৪ অক্টোবর। হোটেলের ডাইনিং হলে সকাল সাতটার দিকে সকল প্রতিনিধিকে প্রাতঃরাশ পরিবেশন করা হলো। সকাল আটটার দিকে আমাদের দলটিকে উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এ নিয়ে যাবার জন্য লিমুজিন বাস এসে পৌঁছলে আমরা যথাসময়ে বাসে আসন গ্রহণ করলাম। অচেনা পথ পেরিয়ে লিমুজিন ছুটে চল্ল উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর দিকে। সকাল ৯:২০ মিনিটের দিকে খধু উযধৎসধ খবপঃঁৎবং, ঊষফবৎ অফারংড়ৎং ্ ঈযধঢ়ঃবৎ চৎবংরফবহঃং দের উপস্থিতিতে সম্মেলন কক্ষে অপপড়ৎফরহম ঃড় ঢ়ড়ংরঃরড়হং এৎড়ঁঢ় ঊীপযধহমবং কার্যক্রম শুরু হল। এৎড়ঁঢ় ঊীপযধহমবং কার্যক্রম চললো ১১:৪০ মিনিট পর্যন্ত। অতঃপর উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর ঈবহঃৎধষ পড়ঁৎঃুধৎফ এ শুরু হলো ডবষ-ঈড়সরহম খঁহপয রিঃয ফরংঃরহমঁরংযবফ এঁবংঃ. সেদিও চীন সরকারের অনেক গণ্যমান্য কর্মকর্তা ডবষ-ঈড়সরহম খঁহপয এ অংশ গ্রহণ করেন।
দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় ডটঢও এর ঞড়ঁৎ ড়ভ খরহমংযধহ ইরম ইঁফফযধ ধহফ ইৎধযসধ ঢ়ধষধপব পরিদর্শনের জন্য বাস যাত্র্।া এখানেই অবস্থিত ডটঢও এর বিরাট পর্বত সমান উঁচু দন্ডায়মান বুদ্ধ (ঝঃধহফরহম ইঁফফযধ)। বলে রাখা দরকার যে, এর আগে ২০০৯ সালে একবার চীন সরকারের আমন্ত্রণে ডড়ৎষফ ইঁফফযরংঃ ঋড়ৎঁস এর দ্বিতীয় সম্মেলনে এসে দন্ডায়মান বুদ্ধমূর্তিটি পরিদর্শন পূর্বক প্রণাম ও পূজা নিবেদন করে আমার নয়ন মন ¯^ার্থক করার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছিল। এটি হল আমার দ্বিতীয়বার পরিদর্শন পূজা ও প্রার্থনা নিবেদন। আড়াইটার দিকে আমরা ডটঢও এর সেই বৌদ্ধ পীঠস্থানে গিয়ে পেীঁছলাম। বলা বাহুল্য ২০০৯ সালে আমাদেরকে এ ইৎধযসধ চধষধপব এর অডিটোরিয়ামে মানব পুত্র বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও ধর্ম প্রচারের উপর ভিত্তি করে একটি ত্রিমাত্রিক সিনেমা শো দেখানো হয়েছিল। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটলো না। তবে সংক্ষিপ্তাকারে। খরহমংযধহ ইরম বুদ্ধের মন্দির চত্বর, অভ্যন্তরস্থ চিত্তাকর্ষক কারুকার্যময় নানা মুর্তি দেখা ও সিনেমা শো শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল ৫টা বেজে গেলো মনে হলো বিধায় আমাদেরকে পর্বত সমান উচুঁ দন্ডায়মান বুদ্ধের পাদমুলে নেয়া হল না। মনে বিরাট একটা আক্ষেপ রয়ে গেল। দ্বিতীয়বার বুদ্ধের পাদমূলে বসে প্রণাম নিবেদন করতে পারলাম না। তবে খরহমংযধহ ইরম বুদ্ধ মন্দির চত্বরের নাতিদূরে আরেকটি অপূর্ব দৃশ্য আমাদেরকে দেখানোর পালা অপেক্ষা করছিল- তা আমরা জানতাম না। কৃত্রিম সরোবরের মাঝখানে একটি কারুকার্যময় বিরাট স্থম্ভ। যার উচ্চতা কমপক্ষে এক-দেড়শত ফুট। স্থম্ভের শীর্ষে একটি না ফোটা বৃহৎ আকৃতির পদ্ম। আমরা সকল প্রতিনিধিবৃন্দ সেই সুরম্য সরোবরের বিরাট চত্বরে গিয়ে পৌঁছুলে শুরু হল পানি খেলা। আস্তে আস্তে পানির গতি বাড়তে বাড়তে না ফোটা পদ্মের কোড়ক বা পাপড়ি স্পর্শ করলো। পানি পদ্মের পাপড়ি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে পদ্ম তার পাপড়ি মেলে ধরতে শুরু করলো। প্রায় পনের মিনিট লাগলো পদ্মের পুরো পাপড়ি মেলে ধরতে। পদ্মের পাপড়ি পুরো মেলে ধরার পর তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো একটি অপূর্ব সুন্দর ঘূর্ণায়মান ঝঃধহফরহম বুদ্ধমূর্তি। আমরা সবাই আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। সকলেই বুদ্ধকে সর্বান্তকরণে প্রণাম নিবেদন করলাম। সেখানে শুুধু আমরা প্রতিনিধিরাই ছিলাম তা কিন্তু নয়। শতাধিক সাদা চামড়ার বিদেশী পর্যটকও আমাদের সাথে আমাদের দেখাদেখি কেউ দাঁড়িয়ে-কেউ বা বসে মানব পুত্র বুদ্ধের পাদমূলে প্রণাম নিবেদন করার প্রয়াস পেলো। সকলেই এ অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার প্রয়াস চালালো। নানা আঙ্গিকে আমিও আমার ক্যামেরায় অনেক ছবি তুললাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হ’ল- বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের যে ক্যানন ক্যামেরাটি আমি সঙ্গে নিয়েছিলাম সেটি একটি পেশাদারি চিত্রনগ্রাহকদের ক্যামেরা।
আমি শখের বশে অল্প-¯^ল্প ছবি তুলতে পারি, কিন্তু তখনও পেশাদারি ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ধারণের মতো দক্ষ ছিলাম না। ফলে আনাড়ি হাতে যে ক’টি ছবি তুলেছিলাম পরবর্তীতে বুঝলাম তার অধিকাংশই ডার্ক হয়ে গেছে। আমার এই ভুলটি ধরা পড়লো যখন বাংলাদেশে এসে ছবিগুলো ক্যামেরা থেকে কম্পিউটার ডাউনলোড করতে গেলাম।
সেই অপূর্ব সুন্দর পানির খেলার সাথে সুদৃশ্য ঝঃধহফরহম ইঁফফযধ ঝঃধঃঁব এর ঘূর্ণায়মান সর্বদিক অবলোকন করার দৃশ্য আমরা প্রায় পনের মিনিট নয়ন মন ¯^ার্থক করে পরিভোগ করলাম। বুদ্ধের ¯œান শেষে পুনরায় আস্তে আস্তে সুবিশাল পদ্ম তার পাপড়িগুলো গুটিয়ে নিলো। পাপড়িগুলো নিজের মতো গুটিয়ে নিতেও সময় নিলো প্রায় দশ মিনিট। পদ্ম তার পাপড়ি সম্পূর্ন ঘুটিয়ে নিল, আমাদের দেখার ও প্রণাম নিবেদনের পালাও সাঙ্গ হল।
আবারও সারিবদ্ধভাবে নিজ নিজ বাসে আরোহন করার পালা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডটঢও এর খরহমংযধহ ইরম ইঁফফযধ ধহফ ইৎধযসধ চধষধপব ঞড়ঁৎ শেষ করে ঘধহলরহম এর উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এসে পৌঁছলাম। ঞবসঢ়ষব এর ঈবহঃৎধষ ঈড়ঁৎঃুধৎফ এ শুরু হল ঘরমযঃ ড়ভ ঃযব ইঁফফযধং খরমযঃং ধহফ উরহহবৎ. ইঁফফযধং খরমযঃ রহংঃবহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ এর প্রারম্ভিক পর্ব থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত তার সার্বিক অগ্রগতি, বাস্তবায়িত কার্যাবলীর খুঁটিনাটি বিবরণ এবং সে সব ক্ষেত্রে আমাদের মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের প্রাণময় অবদান। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময়কালের কথা। জানা গেল-আমাদের মহাচার্য নামজিং এর উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এ এগার বছর বয়সে ঘড়ারপব হিসেবে রংবস্ত্র ধারণ করে ধর্ম-দর্শনের পড়ালেখা শুরু করার বিষয়টি। কিন্তু চৌদ্ধ বছর বয়সে তিনি মন্দির থেকে পালিয়ে তাইওয়ানে তথা ফরমোজা দ্বীপে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তথায় উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন, গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী হওয়া, অনন্য সাধারণ কর্ম সংস্কৃতির বদৌলতে ঐঁসধহরংঃরপ ইঁফফযরংস ঢ়ৎড়ঢ়ধমধঃরড়হ এর লক্ষ্যে ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ইঁফফযরংঃ ঢ়ৎড়মৎবংং ঝড়পরবঃু গঠন, ইঁফফযধং খরমযঃ রহংঃবৎহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে কাউশিয়াং এ ঋড় ছঁধহম ঝযধহ ইঁফফযরংঃ ঞবসঢ়ষব প্রতিষ্ঠা এবং ঐ সব অংংড়পরধঃরড়হ সমূহের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিশ^বৌদ্ধ সমাজের তীর্থভূমি হিসেবে ঋড় ছঁধহম ঝযধহ এর নজর কাড়া- সবকিছুই মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের বোধিসত্ত¡ সদৃশ শুভ ও বিশ^ কল্যাণময় কর্মসংস্কৃতির অভাবিতপূর্ব অবদান সমূহ দেখানো হল সিনেমার পর্দায়। তবে এটা তাঁর সার্বিক অবদানের একটা সংক্ষিপ্ত ধারণা মাত্র। তথাপি তাঁর সমুদ্রসম অবদানের ফিরিস্তি তুলে ধরা এ নিবন্ধের কাজ নয় বিধায় ক্ষ্যান্ত দিলুম। এখানে আমার প্রধান বক্ষ্যমান বিষয় হচ্ছে যে গধরহষধহফ ঈযরহধ এর উধ লঁব ঞবসঢ়ষব থেকে ১৯৪৯ সালে এই মানবশ্রেষ্ঠ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই পুরানো ঞবসঢ়ষব এ তিনি আবার ফিরে এসে এ উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর খোল নলচে বদলে দিলেন। বিশে^র তথা বৌদ্ধ বিশে^র অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনের পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ ঞবসঢ়ষব এর উন্নয়নে মহাচার্য তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করলেন। ২০১৩ এর ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ইঁফফযরংঃ চৎড়মৎবংং ংড়পরবঃু ও ইঁফফযধং খরমযঃ রহঃবৎহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ এর মহাসম্মেলনের যাবতীয় কর্মসূচি এ উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত স্থাপনা সমূহের অভ্যন্তরে খুবই সুন্দরভাবে সুসম্পন্ন হল। এসব স্থাপনা নির্মাণ তিনি কত সাল থেকে শুরু করেছিলেন- তা এ মুহূর্তে আমার জানা নেই। কিন্তু স্থাপনা সমূহের বিশালতা, পরিপূর্ণতা, নিঁখুত অলংকরণ, সৌন্দর্যবর্ধন, ডেকোরেশন, ক্রটিহীন বিন্যাস ইত্যাদি এক কথায় অপূর্ব নজরকাড়া ও প্রশংসনীয়। ২০১৩ সালের অক্টোবরের ১৩ হতে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সম্মেলনে আগত সহ¯্রাধিক প্রতিনিধির উপস্থিতিকে ধারণও ক্রটিহীন ও সর্বাঙ্গসুন্দর আপ্যায়ন কুশলতা কথিত স্থাপনা সমূহের বিশালতা ও ¯^য়ং সম্পূর্ণতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর সকল স্থাপনার নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। ২০ (বিশ) তলা সমান উঁচু আরেকটি বিরাট বিল্ডিং নির্মাণাধীন রয়েছে। হয়তো প্রস্তাবিত ৫ম বিশ^বিদ্যালয়টি উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এর পবিত্র চত্বরে টেম্পলেরই পরিচালনাধীনে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হবে। তাইওয়ান, হংকং, জাপান ও গণচীনের অভ্যন্তরে যতগুলি ইঁফফযরংঃ ঞবসঢ়ষব আমার দেখার সৌভাগ্য ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে, সে সব মন্দিরের প্রবেশ পথে ও প্রস্থান পুথে বুদ্ধের প্রতিকৃতি, বোধিসত্ত¡গণের, অর্হৎগণের, কল্পিত দেবতাগণের ছোট বড় প্রতিকৃতি সম্বলিত হরেক রকমের পণ্য বিক্রয়ের ৮/১০ টি দোকান প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরে দেখেছি। সেখানে চাবির রিং, বুকমার্ক, পাখা, অমিতাভ, মঞ্জুশ্রী, ক্ষিতিগর্ভ, লাভিং বুদ্ধ থেকে শুরু করে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা অসংখ্য পণ্য সামগ্রী অসংখ্য ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ক্রেতারা আগ্রহভরে ঐসব পণ্য সামগ্রী কিনছে। প্রতিটি দোকানে মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের নানা ধরনের বইয়ের সম্ভার, তাঁর ধর্মভাষণের সিডি এবং ভিসিডি বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়েছে। হস্তশিল্প, কারুশিল্প পণ্য সম্ভারও সেসব দোকানে বিক্রয় করা হচ্ছে। দোকান থেকে আমি পিঠ চুলকানের জন্য ৫টি বাঁশের তৈরী হাত কিনে এনেছি। প্রতিটি দোকানে বলা হচ্ছে দোকানে বিক্রিত প্রতিটি পন্য সম্ভারের লভ্যাংশ মন্দির সংরক্ষণ, সংস্কার, নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে ব্যয়িত হবে। মহাচার্যের প্রতিটি বিক্রিত বইয়ের লভ্যাংশ নতুন বই মুদ্রনের জন্য ব্যয়িত হবে। ১৫ অক্টোবর প্রাতঃরাশ সারলাম হোটেলের ডাইনিং হলে। আমাদের খড়হমরিহম ডধহ হোটেলে ৫ জন ভারতীয়ত, ৭ জন ব্রাজিলিয়ান, ৩ জন অস্ট্রেলিয়ান, ১ জন সিঙ্গাপুরের ভিক্ষুনী, আমি বাংলাদেশী একজন, আর ৩ জন তাইওয়ানের প্রতিনিধি মিলে সর্বসাকুল্যে ২০ জন লোকের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রাতঃরাশের সময় সকলের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরিয়ান ভিক্ষুনী ঠবহ. ইযরশংঁহর ঈযঁপয গবহ হলেন আমাদের গাইড। যেহেতু আমরা সবাই ইংরেজি ভাষী এবং তিনি ও ইংরেজি ভাষায় পারঙ্গম তাই উধ ঔঁব ঞবসঢ়ষব অথরীতি কর্তৃপক্ষ সেজন্য তাঁকেই আমাদের দোভাষী গাইড হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে বলে মনে হল। সকাল ৮ঘটিকার দিকে যথারীতি বাসে উঠে আমরা উধ ঔঁব ঞবসঢ়ষব এ এসে পৌঁছলাম। সকাল ৯.০০ টার দিকে শুরু হল দল ভিত্তিক ঔড়রহঃ ঋবষষড়ংিযরঢ় বৈঠক। বৈঠকে ধর্ম চৎড়ঢ়ধমধঃরড়হ এর ক্ষেত্রে সুবিধা অসুবিধা সমূহ উঠে আসলো। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগণের মাঝে ঐঁসধহংঃরপ ইঁফফযরংস এর ভড়ষষড়বিৎং রা তাঁদের ঁঃসড়ংঃ ঞবসঢ়বৎধসধহঃ বজায় রেখে কিভাবে কাজ আদায় করবে। কাজে অগ্রগতি সাধন করবে এবং গৃহীত কর্মসূচি শতভাগ বাস্তবায়ন করবে তার দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা এ বৈঠকের মুখ্য আলোচ্য বিষয় বলে বিবেচিত হল। বৈঠকে চ্যাপ্টার প্রধানরা খধু উযধৎসধ খবপঃঁৎবৎ গণ এবং ঊষফবৎ অফারংড়ৎ গণ ইঁফফযরংস চৎড়ঢ়ধমধঃরড়হ এর ক্ষেত্রে নিজ নিজ অভিজ্ঞতার কথা সবিস্তারে তুলে ধরলেন। চ্যাপ্টারের নতুন চৎবংরফবহঃ ্ ঝবপৎবঃধৎু দের সাথে ঊষফবৎ অফারংড়ৎ দের পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে কাজের ক্ষেত্রে নব নব প্রেরণা উৎসর্জন, একবিংশ শতাব্দীর প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ^ব্যবস্থায় নব নব সৃজনী শক্তির আলোকে বুদ্ধের অহিংস ধর্মকে প্রজন্মের মনন চেতনার গভীরে দৃঢ়ভাবে শ্রদ্ধার আসনে প্রোথিতকরণ খুবই জরুরী কাজ হিসেবে বৈঠকের সকলের বক্তব্যেই উঠে আসলো।
সকাল ১১টা পর্যন্ত এ বৈঠক চললো। সেদিন একটু সকাল সকাল আমাদেরকে লাঞ্চ পরিবেশন করা হ’ল। লাঞ্চের পর সকল প্রতিনিধিবৃন্দকে নিজ নিজ পছন্দ অনুসারে ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়। ‘এ’ দলটি হলো ঢরীরহম এর খড়হমনবর গড়ঁহঃধরহ ধহুর এধৎফবহ পরিভ্রমণ। ‘বি’ দলটি হলো ণধহংযড়ঁ এর ংষবহফবৎ বিংঃ ষধশব পরিভ্রমণ ও ‘সি’ দলটি হলো ঞড়ঁৎ ধহফ ঠরংরঃ. আমার পছন্দের তালিকায় ছিল ঢরীরহম এর খড়হমনবর গড়ঁহঃধরহ ধহফ ণর এধৎফবহ টি নয়ন মনভরে দেখা। গড়ঁহঃধরহ এর উপর থেকে মহাচীনকে যদ্দুর সম্ভব চোখ বুলানো। তাছাড়া পাহাড় পর্বত সঙ্কুল পার্বত্য চট্টগ্রামেই আমার জন্ম। পর্বত পরিভ্রমণ, পর্বতের চূড়ায় উঠে স্থল ভূমির অনিন্দ্যসুন্দর শোভা উপভোগ আমার আজন্মকালের বাসনা। তাই পূর্বেই ‘এ’ দলে আমার নামটি তালিকাভুক্ত করেছিলাম। আমার দেখাদেখি দার্জিলিং এর ঠবহ. উযধৎসধফযরৎড় গধযধঃযবৎধ ও ‘এ’ দলে তাঁর নামটি নথিভূক্ত করলেন। ঢরীরহম এর খড়হমনবর গড়ঁহঃধরহ ধহফ ণর এধৎফবহ দেখার জন্য আমরা সকলেই যার যার পূর্ব নির্ধারিত বাসে চড়ে বসলাম। ঘন্টা খানেকের মধ্যে বাস আমাদেরকে ণর এধৎফবহ পেরিয়ে খড়হমনবর গড়ঁহঃধরহ এর রূপওয়ের গোড়ায় নিয়ে পৌঁছালো। আমাদের বাসটি যেহেতু সর্বাগ্রে সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে সেহেতু তড়িঘড়ি করে রূপওয়ে দিয়ে পর্বতের শীর্ষচূড়ায় পৌঁছার উদ্দেশ্যে আমরা চার জন, (আমি, ধর্মধীরো ও একটি অস্ট্রেলিয়ান কুপল) রূপওয়ের গাড়িতে চড়ে বসলাম। আমাদের রূপওয়ে গাড়ি শূণ্য মার্গে চলতে শুরু করলো। সেদিন আকাশ মেঘলা ছিল। রাত্রে দু’য়েক পসলা বৃষ্টি হয়েছে। বাতাস ও অনেকটা কুপিত ছিল। আমরা যখন রূপওয়ের গাড়িতে চড়ে বসলাম তখন বৃষ্টি ছিল না। বাতাস ও তেমন বইছিল না। কিন্তু আমাদের গাড়ি যখন শূণ্য মার্গে প্রায়ই মাঝপথে তখনই শুরু হলো বাতাস। শা শা শব্দে বাতাস আমাদের গাড়িকে আঘাত করছে। আমরা চার জন শূণ্যে ঢুলতে থাকি। গহীন বাঁশবনের মাথার উপর দিয়ে আমাদের গাড়িটা চলছিল। শুধু আমরা নই, আমাদের পেছনে আরও কমপক্ষে ২০টি গাড়ি রয়েছে। যখন প্রবল বাতাস প্রবাহিত হয় তখন রূপওয়ে বন্ধ থাকে। আমরা শূণ্যে ঢুলতে থাকি। বাতাসের বেগ কমলে রূপওয়ে আবার চালু হয়। এভাবে বাতাসের সাথে লড়াই করতে করতে প্রায় ঘন্টা খানেক লাগলো আমাদের পর্বতের শীর্ষ চুড়ায় পৌঁছুতে। আমাদের পেছনে যে ২-টি গাড়ি ছিল সেই গাড়িগুলি শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছানোর পর কর্তৃপক্ষ রুপওয়ে বন্ধ করে দিলেন। পর্বতের শীর্ষ চূড়ায় একটি সুদৃশ্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। তাতে উঠে আমরা ছবি তুললাম। এখন নীচে নেমে আসার পালা। আমরা শতাধিক মানুষ সিড়ি পথ দিয়ে নীচে নেমে আসতে শুরু করলাম। সিড়ি দিয়ে নীচে নামা যে কি কঠিন ও কষ্টসাধ্য তা আমার জানা ছিল না। সেই পর্বত চূড়া থেকে সমতল ভূমির টয় গাড়ীর রাস্তা পর্যন্ত কমপক্ষে তিন’সহ¯্রাধিক সিঁড়ি তো হবেই। সেই দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামা হয়তো তিন ভাগের দু’ভাগ আমার দ্বারা সম্ভব হয়েছে। পরে আমার দু’পা আর আমার ভার বইতে পারছে না। সিঁড়ির মাঝ বরাবর গড়িয়ে পড়তে পড়তে কোন রকমে বসে পড়লাম। তৎক্ষণাৎ দু’জন শক্ত সমর্থ চীনা যুবক দেবদূতের মতো আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন। ডান বাম দু’হাতে দু’জন শক্ত করে ধরে আমাকে তাঁরা সিড়ির শেষ ধাপ পর্যন্ত নিয়ে এসে একেবারে টয় বাসে তুলে দিয়ে বৈতরণী পার করে দিলেন। তাঁরা যদি আমাকে সেদিন সাহায্য না করতেন তাহলে নিশ্চিত দুর্ঘটনার হাত থেকে আমি কোন ক্রমেই মুক্তি পেতাম ন্ াদু’জন চীনা যুবকের প্রাণপণ অন্তরঙ্গ সাহায্য প্রদান সত্তে¡ও উধ ঔঁব ঞবসঢ়ষব এ এসে ডিনারে অংশ গ্রহণ, মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের হাতে আমার ভাবানুবাদ কৃত বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান ও এৎড়ঁঢ় ঞড়ঁৎ ঈ তে নথিভূক্ত ১৫ জন প্রতিনিধির সাথে ভ্রমণ সংক্রান্ত বৈঠক সেরে আমার জন্য নির্ধারিত হোটেলে ফিরে এসে দেখলাম-আমার দু’পা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ইষৎ গরম পানিতে পা ধৌত করলাম। খুব ভালোভাবে বাথটাবে ইষৎ উষ্ণ গরম পানি ধারণ করে তার মধ্যে আধাঘন্টা পর্যন্ত নাক বরাবর ডুবে থাকলাম। পায়ের ব্যথা কিছুটা কমলো সেদিন হোটেলে আমি একা। ভারতীয় বন্ধুরা নিজ¯^ উদ্যোগে চীনের এৎবধঃ ডধষষ দেখতে রাতের ট্রেনে বেইজং চলে গেছেন। অপর ভারতীয় বন্ধু ঠবহষ. উযধৎসধফযরৎড় রাতের বিমানে হংকং চলে গেলেন।
পরের দিনের কথা। প্রাতঃরাশের পর কর্তৃপক্ষ আমাকে একটি প্রাইভেটকারে করে এৎড়ঁঢ় ঞড়ঁৎ ‘সি’ এর প্রতিনিধিদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য অন্য একটি হোটেলে নিয়ে গেল। সেখানে এৎড়ঁঢ় ঞড়ঁৎ ‘সি’ এর সকল প্রতিনিধির সাথে আমার পরিচয় হল। এৎড়ঁঢ় ঞড়ঁৎ ‘সি’ তে আমরা সর্বসাকুল্যে ১৬ জন। বাসের ড্রাইভার, ট্যুরগাইড সহ আমরা পুরুষ ৪ জন আর বাকী ১২ জন মহিলা। এই ১২ জন মহিলার মধ্যে দু’জন ভিক্ষুণী। চীনের সব গাড়ি বাম পাশে চালিত। বাসের দরজায় পাশের দু’জনের সিটে আমি একজন। ড্রাইভারের অব্যবহিত পেছনের সিটে ট্যুর গাইড। তাঁর পেছনে দু’জন ভিক্ষুনী। আমার পেছনের সিটে দু’জন জাপানি মহিলা। তাঁরা দুজনেই ইংরেজি বলতে পারেন বিধায় আমার সুবিধার্থে গাইড মহোদয় তাঁদেরকে সেখানে বসতে বলেছেন। যেসব নির্দেশনা চীনা ভাষায় দেয়া হয় সেসব তাঁরা ইংরেজিতে তর্জমা করে আমাকে বলেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন ও আমার সুবিধা অসুবিধার কথা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
খড়হমনবর গড়ঁহঃধরহ পরিদর্শনের সময় আমার দু’পা কিছুটা নড়বড়ে হওয়ায় আংশিক খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছিলাম দেখে জাপানি মহিলাদ্বয় ব্যথা বেদনা উপশমের লক্ষে দু’টি মেডিকেটেড প্লাস্টার আমার দু’হাঁটুতে লাগিয়ে দিলেন। একদিন ও একরাত্রি ঐ প্লাস্টারদ্বয় আমার দু’হাঁটুতে লাগানো ছিল। এতে আমার দু’পায়ের ব্যথা অনেকটা উপশম হল। এৎড়ঁঢ় ঞড়ঁৎ ‘সি’ তে আমরা মাত্র ১৮ জন। ড্রাইভার ও ট্যুর গাইডকে বাদ দিলে আমরা মাত্র ১৬ জন বিদেশী পর্যটক। তন্মধ্যে জাপানি ১০ জন, ব্রাজিলিয়ান ৫ জন, আমি বাংলাদেশী ১ জন। যে কোম্পানির বাসে করে আমাদের ঞড়ঁৎ শুরু হল সে কোম্পানির মালিক একজন চীনা ভদ্রলোক। তার নাম গৎ. ডধহম । তিনি বিয়ে করেছেন তাইওয়ানের একজন ভদ্রমহিলাকে। গৎ. ডধহম ঔরহম এর সহধর্মিনীও আমাদের সাথে ছিলেন একজন পর্যটক হিসেবে। সেজন্যে বোধ হয় ভ্রমণে সকল পর্যটককে বিশেষ যতœ নেওয়া হয়েছিল। গধরহষধহফ চায়নার যুবকদের সাথে তাইওয়ানের যুবতীদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার যে তাগিদ ও সর্ব প্রযতœ মনোভঙ্গি পরিলক্ষিত হল তাতে আমি খুবই আশাবাদি যে, একদিন হয়তো চীনের এক চীন নীতি বিনাদ্বিধায় বাস্তবায়িত হবে।
যাহোক, আমাদের বাস ঐধহমুযড়ঁ এর অভিমুখে বড় রাস্তা ধরে এগিয়ে চললো। এই রাস্তা থেকে ডানে ঘুরে ডীঁর এর আরও বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ সুপ্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন ও বুদ্ধের পাদমূলে প্রণাম নিবেদন করার অবকাশ পেলাম। অনেক মহাজ্ঞানী ভিক্ষু ও ভিক্ষুনীর দেখা পেলাম। দুপুর ১টার দিকে ডীঁর এর একটি রেস্তোরায় আমরা লাঞ্চ সারলাম। লাঞ্চের পর আবার যাত্রা শুরু হলো। ১৬ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ছয় দিনের ভ্রমণে কোন দিন কোথায় রাত্রী যাপন করবো, কোথায় লাঞ্চ ও ডিনার করবো, কী কী পর্যটন করবো তার একটা পূর্ব নির্ধারিত ছক বোধ হয় ছিল। তাই ডীঁর এর পর আরও একটি বিরাট নগরীতে গিয়ে পৌঁছলাম। সব নগর নগরীর নাম মনে রাখা বড়ই কঠিন। আরও কঠিন চীনা ভাষায় লিখিত মন্দির, বৌদ্ধ স্থাপনা ও বৌদ্ধ পীঠস্থান সমূহের নাম মনে রাখা। জিজ্ঞাসা করলে স্থাপনাসমূহের নাম বলে দেয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ কাগজ কলম কোথায় পাই যে, ঐ স্থাপনা সমূহের নাম লিখে রাখি। ডায়েরি অথবা একখন্ড সাদা কাগজও আমার সাথে ছিল না। শুধু ক্যামেরার ব্যাগটি আমার কাধেঁ ঝোলানো থাকতো। তাও যেন তেন ক্যামেরা নয়, দস্তুরমতো ক্যানন কোম্পানীর বিরাট প্রফেশনাল ক্যামেরা। চীন পর্যটনে যাবার আগে ক্যামেরার পূর্বের মালিকের কাছ থেকে ক্যামেরা চালানো এবং এর খুঁটিনাটি শিখে নেওয়ার অবকাশও পাইনি। পর্যটনের গোটা ৬ দিনে হাজার দেড়েক ছবি তুললেও সব ছবি ভালো মানের হয়নি মোটেই। ক্যামেরার ছবি দেখেও পর্যটনের খুটিনাটি ব্যাখ্যা করা যেতো। কিন্তু এখন আর তা হবার নয় বলে দুঃখিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
সদ্ধর্মপ্রাণ উপাসক উপাসিকাদের সমীপে ধর্ম ভাষণের সময় আমরা ভিক্ষুরা অবকাশ পেলেই বলে থাকি- ‘এসেছি একা যাবোও একা, অর্থাৎ মাতৃকুক্ষি থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছি একা আর আয়ুক্ষয় হলে মৃত্যুর হীম শীতল কোলে ঢলে পড়বোও একা,’ এটি মানব জীবনের অমোঘ সত্য হলেও তীর্থ পর্যটনে অথবা কোনো ভ্রমণে একা যাওয়া ঠিক নয় বলে এবারের ভ্রমণে তা আমি হাড়ে হাড়ে ঠাওর পেয়েছি। আমার নিজ¯^ ক্যামেরা থাকা সত্তে¡ও নিজের ছবি তুলতে গেলে অন্য একজনকে অনুরোধ করে বলতে হয়- প্লিজ এখানে আমার একটা ছবি তুলে দিন। এ রকম কত আর অনুরোধ করা যায়? সবাই আবার আমার ক্যামেরাটি চালাতেও জানে না। এখন পর্যটকরা সকলেই মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে। তা দিয়ে নিকট জনের সাথে দূরাভাষের কাজও সারে আবার প্রয়োজনের সময় ছবিও তুলে। তাই আমার সহযাত্রী সব পর্যটকদের হাতের মোবাইল সমূহ ঝধসংধহম এধষষধীু ঝ৪ মোবাইল। ঐ মানের মোবাইলের আমাদের বাংলাদেশে প্রতিটির দাম কমপক্ষে ৬৩,৫০০ টাকা অথবা ৬৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঐ মানের মোবাইল কিনে ব্যবহার করার সৌভাগ্য আমার জীবনে এখনো হয়ে ওঠেনি। তবে মাঝে মাঝে বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে দূর থেকে ঐ সব মোবাইলের শ্রীমুখ দর্শন করে আসি। ডীঁর থেকে ঐধহমুযড়ঁ যাবার পথে আমরা একটি পর্বতের পাদদেশে নামলাম। দেখলাম পর্বতের আনাচে কানাচে অনেক সুরঙ্গ। সুরঙ্গের প্রবেশ মুখে সুদৃশ্য বুদ্ধমূর্তি খোদাই করা। নিরেট পাথর কেটে কেটে ঐ সব সুদৃশ্য নানা মুদ্রার, নানা অঙ্গসংস্থিতির বুদ্ধমূর্তি অপূর্ব সুন্দর ও শ্রদ্ধা জাগানিয়া। সুরঙ্গসমূহ বস্তু ভিক্ষুদের ধ্যান সমাধির উপযোগী করে তৈরী করা। আলো কম থাকার দরুণ সুরঙ্গে প্রবেশের অনুমতি ছিল না। গাইড বললো- ধ্যান সমাধির উপযোগী সুরঙ্গ নির্মাণ ও পর্বত গাত্রের সর্বত্র অনন্য সুন্দর বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের কৃতিত্ব বহু শতাব্দীর আগের একজন ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুর। ভাষাগত দৈন্যতার কারণে সেই ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুর পালি অথবা সংস্কৃত ভাষার নাম আমি উদ্ধার করতে পারিনি। কারণ কোন মহাভিক্ষু ভারত বাংলাদেশের হলেও চীনারা তাঁদের ভাষায় তাঁদের নাম উচ্চারণ করেন। যেমন বাংলার সত্যসূর্য অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞানের না জো-বো-জে (ঔড়াড়-ঔব) অর্থাৎ প্রভু ¯^ামী বা ঝঁঢ়ৎবসব খড়ৎফ. অতীশ দীপংকরের আগেও আচার্য শান্তরক্ষিত ও আচার্য পদ্ম সম্ভব তিব্বত হয়ে চীন গিয়ে বুদ্ধের ধর্ম-দর্শন প্রচার করেন। এরূপ আরও অনেক পন্ডিত বৌদ্ধ ভিক্ষু তিব্বত হয়ে চীনে গেছেন- যাঁদেরকে চীনারা তাঁদের প্রদত্ত অভিধা অনুসারে ডাকেন- যা প্রাচীন চীনা ইতিহাসের গভীরে না ঢুকা পর্যন্ত ভারত-উপমহাদেশে প্রদত্ত নাম বের করে সঠিক নামটি পরিচিহ্নিত করা কঠিন। পর্বত গাত্রে ১৫টি গুহা, অসংখ্য খোদাইকৃত অপূর্ব সুষমামন্ডিত বুদ্ধমূর্তি এখনও হাজার বছরের
ঐতিহ্যকে ধারণ করে কালের সাক্ষী হিসেবে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ¯^দেশী বিদেশী পর্যটকের হৃদয়ে অহিংসা ও মৈত্রীর অমীয় প্রেমের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। পর্বতের নাতিদূরে একটি বিরাট বৌদ্ধ মন্দির। পর্বত গাত্রের গুহাগুলি বিবিক্তসেবী ভিক্ষুদেরই ধ্যানকুঠির বলে মনে হলো। এখনও ঐ গুহাগুলি ধ্যানাভ্যাসের জন্য ব্যবহৃত হয় কি না, জানি না। কিন্তু পাশর্^বতী মন্দিরের বিরাটত্ব ও মন্দির সংলগ্ন অপরাপর স্থাপনার সংখ্যা দেখে মনে হলো ঐ মন্দিরে বর্তমান কালের ভিক্ষু ভিক্ষুনীরা আধুনিক প্রযুক্তির বদান্যতায় পর্বত গাত্রের ঐ গুহাগুলি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না। ঐ পর্বতগাত্রের গুহা ও খোদাই করা শতাধিক বিরাটকার বুদ্ধমূর্তি, সহ¯্রাধিক গুচ্ছবদ্ধ বুদ্ধমূর্তি ঘুরে দেখতেই আমাদের দিন চলে গেল। সেখান থেকে ডিনার করার জন্য আমরা একটি সুপরিচ্ছন্ন রেস্তোরায় চলে গেলাম। ডিনার সারতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে গেল। ডিনারের পর আমাদেরকে সার্কাস দেখানোর জন্য দশ সহ¯্রাধিক মানুষের জনারণ্যে নেয়া হল। সেখানে ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। নয়নভরে যা দেখলাম তা দেখলাম। কিন্তু সার্কাসের কুশীলবদের শারীরিক কসরতের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। এরূপ সার্কাস সাংহাই এসেও আরেকবার দর্শন করলাম। তবে ঐধহমুযড়ঁ আর সাংহাই সার্কাসের মধ্যে আইটেমগত পার্থক্য ছাড়া প্রদর্শিত শারীরিক কসরৎ প্রায় একই বলে মনে হল। আজ অক্টোবরের ১৭ তারিখ। প্রাতঃরাশের পর ঐধহমুযড়ঁ এর ডবংঃ খধশব ডড়ৎষফ ঘধঃঁৎব ঐবৎরঃধমব দেখতে গেলাম। হোটেল থেকে সেখানে যেতে সাড়ে নয়টা বেজে গেলো। কিছুক্ষণ লেক পাড়ের নানা স্থাপনা ও মন্দির পরিদর্শন করলাম। দুপুর বারোটার দিকে একটি রেস্তোরায় সকলকে লাঞ্চ করানো হলো। হাজার হাজার দেশি বিদেশী পর্যটক বিরাট লেকের চর্তুদিকে গিজ গিজ করছে। লেক থেকে দূরে দূরে ৩টি সুরম্য বুদ্ধ মন্দির দেখা যায়। দুপুর ২টার দিকে গোটা লেকটি পরিভ্রমণ করে লেকের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকনের লক্ষে ২টি আটজন লোকের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বোট ভাড়া করা হল। দু’টি বোটকে পাশাপাশি রেখে আমরা প্রাণভরে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এক পর্যায়ে গঁংরপ ঋড়ঁহঃধরহ এর কাছাকাছি আমাদেরকে নামিয়ে দেয়া হল। আমরা গানের তালে তালে অপূর্ব সুন্দর পানির খেলা উপভোগ করলাম। এটি উপভোগ করতে করতে ঘড়িতে ৬টা বেজে গেল অর্থাৎ এখন সন্ধ্যা। আমরা আবার একটি রেস্তোরায় ডিনার সারলাম। ডিনারের পর সাড়ে আটটার দিকে রওয়ানা দিলাম সম্পূর্ণ পানির উপর মঞ্চস্থ একটি অপেরা দেখতে। ঠিক ৯ ঘটিকার সময় অপেরা শুরু হল। দিনভগে হয়তো এর উপর দিয়ে বোটে করে আমরা নৌবিহার করেছি। কিন্তু রাত্রে এ লেকের কিয়দংশ নাটক মঞ্চায়নের জন্য ব্যবহৃত হবে-তা কে জানতো। পানির উপরেই নাটকটা মঞ্চস্থ হলো। কুশীলবদের হাটাচলায় পানি ছিটকে পরার দৃশ্য দেখা গেল। দিনের বেলায় হয়তো নাটক মঞ্চায়নের মঞ্চটি পানির গভীরে লুকানো ছিল। রাত্রে নাটকের সময় মঞ্চটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে মঞ্চায়নোপযোগী করে উঠানো হল। নাটকের মধ্যে পৌরাণিক কাহিনী তথা ঝড়হম উুহধংঃু এর একটি ট্রাজিক কাহিনী মঞ্চস্থ করার সর্বাঙ্গ সুন্দর প্রয়াস পরিলক্ষিত হলো। ভাষা না বুঝলেও মঞ্চায়ন কৌশল সহ¯্রাধিক মানুষের হৃদয় কেড়েছে বলা যায়। নাটক মঞ্চায়ন কৌশলের সাথে লেজার রশ্মির মাধ্যমে পানির খেলা, পানির পিরামিড গঠন, তার মধ্যে নানা রংয়ের আলোক রশ্মির প্রক্ষেপণ আমাদেরকে অভিভূত করেছে। বহুদূর থেকে শূণ্যমার্গে এসে নায়ক নায়িকার পারস্পরিক মিলন দৃশ্য অনেকটা অলৈাকিকতা নির্ভর। অদৃশ্য রশ্মির সাহায্যে এরূপ দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে বলে মনে হল। সেজন্যে রাতেই শো প্রদর্শনের ব্যবস্থা। এর থেকেও বেশি শ্রদ্ধা জাগানিয়অ বিষয়টি হল নাটকের শেষ দৃশ্যে মানবপুত্র গৌতম বুদ্ধকে দেখানো হল। বুদ্ধের অহিংস ও মৈত্রীময় ধর্মাভিযানের ফলে চীনের মানুষের চারিত্রিক, নৈতিক ও বৈষয়িক পরিবর্তন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা প্রদর্শিত হল।
ভাষা না বুঝার দরুণ মঞ্চস্থ নাটকটির সত্যিকার রস আ¯^াদন সম্ভব হল না। এসব শোতে দর্শক হিসেবে শুধু আমরা নই সহ¯্রাধিক দেশি বিদেশী দর্শক শো উপভোগ করেছে। নাটক শেষ হলে আমাদের গাইড তাঁর পতাকাটি উচ্চে তুলে ধরলেন। সেটির প্রতি লক্ষ্য রেখে হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে আমাদের ছুটে চলা এবং যন্ত্রযানটির দিকে অগ্রসর হওয়া এবং যন্ত্রযানে সওয়ার হতে পারলেই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থা। তবে আমার সামনে ও পেছনে দু’জন তাগড়া যুবতী মহিলা আমাকে সব সময় সাহায্য করেন ও পাহারায় থাকেন। প্রয়োজনে হাত ধরে হলেও ভিড় সামাল দিয়ে গন্তব্যে নিয়ে যান। সুন্দরী যুবতীর সাথে হাত ধরাধরি করে রাতের বেলা হাজারো মানুষের ভিড় অতিক্রমনের দৃশ্য বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কেউ যদি দেখতেন তাহলে নির্মম ও মুখরোচক সমালোচনার হাত থেকে আমার নিস্তার পাওয়া বড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়াতো।
আমরা রাত এগারোটার দিকে হোটেলে গিয়ে পৌঁছলাম। বাথটাবে নাক বরাবর ইষৎউড় গরম পানিতে ১৫ মিনিটের মতো ডুবে থেকে পরিতৃপ্তির ¯œান সারার পর বিছানায় গা এলিয়ে দেই। একঘুমে রাত সাবাড় হয়ে গেল। ১৮ অক্টোবর ২০১৩। উধ ঔঁব ঞবসঢ়ষব থেকে ১৬ অক্টোবর ডীঁর এর দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করতে করতে ঐধহমুযড়ঁ এর যে হোটেলে রাত্রি যাপন করেছিলাম সেই হোটেলে আমরা ১৭ তারিখের রাতটিও যাপন করলাম। ১৮ অক্টোবর হোটেলের ডাইনিং হলে প্রাতঃরাশ সারার পর হোটেল থেকে ঈযবপশ ঙঁঃ করে সকলেই বাসে আরোহন করলে গাইড আমাদের সকলের মাথা গণনা করে বাস ছেড়ে দিতে ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলেন। আমরা সাংহাই এর দিকে রওয়ানা দিলাম। ঐধহমংযড়ঁ ও ঝযধহমযধর এর মাঝামাঝিতে বেশ কয়েকটি পুরনো বৌদ্ধ মন্দির, বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা পরিদর্শন করার পর অপরাহ্ন চারটার দিকে আমাদেরকে একটি সুবিশাল বাণিজ্য কেন্দ্রের পাশে নামানো হয়। হয়তো জাপান থেকে যাঁরা এসেছেন তাঁরা কিছু কেনাকাটা করতে চান। ঐধহমুযড়ঁ থেকে চেষ্টা করছিলাম অন্তত দু’শ ডলার ভাঙিয়ে কিছু চিনা মুদ্রা হাতে রাখতে। হাতে চিনা মুদ্রা না থাকার দরুণ কোথাও কিছু কিনতে ইচ্ছে হলেও কিনতে পারিনি। প্রত্যেকটি বৌদ্ধ মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নানা রং বেরং এর দ্রব্য সামগ্রীর পসরা সাজানো সুসজ্জিত দোকান রয়েছে।
যে বাণিজ্য কেন্দ্রের পাশে আমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হল মাত্র দেড় ঘন্টার জন্যে, সেটি ছিল ডুঁযবহ ঊধংঃ ড়ভ ডবংঃ ঝপরবহরপ তড়হব। আমাকে যে দু’জন জাপানী মেয়ে আন্তরিকতার সহিত সহযোগিতা করেন তাঁদেরকে ১৬ অক্টোবর ভ্রমণ শুরুর প্রারম্ভেই বলেছিলাম, আমি দু’শ ডলারের চীনা মুদ্রা হাতে রাখতে চাই। এটিও তাঁদেরকে বলেছিলাম যে, আমার হাতে এক কানা কড়িও চীনা মুদ্রা নেই। যদিও আমাদের ভ্রমণের সমস্ত ব্যয়ভার নির্বাহ করার জন্যে মাথাপিছু ৮২০ (আট শত বিশ) ডলার পূর্বেই ভ্রমণ আয়োজকদের হাতে জমা দিয়েছি এবং তাঁরা আমাদেরকে দৈনন্দিন চাহিদার সবকিছুই সরবরাহ করেন নিয়ম নিষ্ঠভাবে, তবুও কোন পছন্দসই জিনিস কেনার প্রয়োজনে নিজের হাতে কিছু টাকা থাকা চাই। যেহেতু দেড় ঘন্টা সময় হাতে পেয়েছি, তাই আমার একান্ত সহযোগী ঈযড়ড়হম গধু ঈযরহম কে সঙ্গে নিয়ে গড়হবু ঊীপযধহমব ঈবহঃৎব খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম। মার্কেটের অনেকের কাছে জিজ্ঞাসা করতে করতে পয়তাঁল্লিশ মিনিট পর বহু কাক্সিখত গড়হবু ঊীপযধহমব ব্যাংকটি খুঁজে পেলাম। ব্যাংকে ঢুকলাম। সহযোগী ঈযড়ড়হম গধু ঈযরহম বিষয়টি ব্যাংক ম্যানেজারকে বুঝিয়ে বললেন। আমি পাসপোর্টসহ দু’শ ডলার ব্যাংকের কাউন্টারে জমা দিলাম। ব্যাংক ম্যানেজার ক্যামেরায় বার বার আমার মুখাবয় দর্শন করছেন। এক পর্যায়ে ডলার সমূহের জাল ডলার কি না তার পরীক্ষ নিরীক্ষার কাজ শেষ হল। আমার সহযোগী ঈযড়ড়হম গধু ঈযরহম আমার ব্যাপারে সবিস্তারে চীনা ভাষায় অনেক কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বলতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অনুমান করলাম। বহু প্রতীক্ষার পর দু’শ ডলারের বিনিময়ে ১২০০ (এক হাজার দু’শত) চীনা মুদ্রা হাতে পেলাম। এতে সময় লাগলো ৪৫ (পয়তাল্লিশ) মিনিট। যেহেতু গড়হবু ঊীপযধহমব ব্যাংকটি খুঁজতেও ডলার বিনিময়ের কাজে দীর্ঘ দেড় ঘন্টা সময় অতিবাহিত করেছি, আমাদের বরাদ্দ পাওয়া সময় এ দু’টি কাজ করতেই ব্যয়িত হল তাই চীনা মুদ্রা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উর্ধোশ^াসে গাড়ির দিকে ছুটতে লাগলাম। গাড়িতে পৌঁছে দেখলাম অনেকেই অনেক কিছু কেনাকাটা করে ফিরে এসেছেন। আমার জন্যও অনেকে অনেককিছু তাঁদের পছন্দসই জিনিস উপহার দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছেন। মুদ্রা বিনিময়ের কাজটি সম্পন্ন করতেই দেড় ঘন্টা সময় পেরিয়ে গেলো বিধায় আমি কোন কিছুই পছন্দনীয় জিনিস কিনতে পারলাম না। কাউকে কোন কিছু উপহার হিসেবে দেয়াও সম্ভব হলো না বলে মর্মযাতনার অন্ত ছিল না আমার। যা হোক। সকলে বাসে উঠলে বাস ছেড়ে দিল এবং ডিনার সারার জন্যে একটা রেস্তোরায় আনা হলো। ডিনারের পর আবারও বেরিয়ে পড়লাম ডুঁযবহ শহরের ইধসনড়ড় চড়ষব চবৎভড়ৎসধহপব ড়ভ ইড়ধঃ, এড়ফ ঋড়ৎঃঁহব ইধু, এড়ফ ঋড়ৎঃঁহব ঞবসঢ়ষব, ঋড়ষশ ঈঁংঃড়স গঁংবঁস, অহপরবহঃ ইবফ গঁংবঁস সর্বশেষে ডরহব উরংঃরষষবৎু ডড়ৎশংযড়ঢ় দেখার জন্য। বহু পর্যটকের ভিড়ে ভিরমি খাওয়ার দশা। মাঝে মাঝে দলছুট হয়ে পড়ছিলাম। যদিও দু’জন ইংরেজি জানা ভদ্রমহিলা সব সময় আমার আশে পাশে থাকেন এবং আমাকে প্রদর্শিত বিষয়সমূহ বুঝাতে চেষ্টা করেন তবুও সংকীর্ণ গলি পথে বহু পর্যটকের ভিড়ে পরস্পর প্রায়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলাম। তবুও আমাকে চেনা সহজ, কারণ আমি রং বস্ত্রধারী। হারিয়ে গেলেও বহুদূর থেকে আমাকে পরিচিহ্নিত করা সম্ভব। প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা বহু দর্শনীয় স্থান, পরিদর্শন ও পরিভ্রমণ সমাপ্ত করে প্রায় এগারোটার দিকে হোটেল কক্ষে ফিরে এসে গরম শাওয়ারের পর বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম। আজ ১৯ অক্টোবর। যথারীতি প্রাতঃরাশের পর সকলে বাসে আরোহন করলে বাস ছেড়ে দিল। আমরা ক্রমাš^য়ে বাণিজ্যিক রাজধানী সাংহাই অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিলাম। যাবার পথে আমাদের মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন কর্তৃক তাইওয়ানের কাউশিয়াং এ প্রতিষ্ঠিত ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ বৌদ্ধ পীঠস্থানের একটি শাখা কার্যালয় তথা মন্দির পরিদর্শন করলাম। এটি সুবিশাল সাংহাই নগরীর সন্নিকটস্থ শহরতলী হতে পারে। আমাদের সকলকে সেখানে সম্বর্ধনা জানানো হ’ল। বিরাটকায় ২০ তলা ভবনের ১১ ও ১২ তম তলা ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ এর গৃহীত ঐঁসধহরংঃরপ ইঁফফযরংস ঢ়ৎড়ঢ়ধমধঃরড়হ এর জন্য ভাড়া করা হয়েছে। গধরহষধহফ ঈযরহধ এর অভ্যন্তরে মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের দোর্দন্ড উপস্থিতি ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ বৌদ্ধ মন্দিরের গৃহীত যাবতীয় জনহিতকর, কল্যাণকর, বহু শিল্প, ক্ষুদ্রশিল্প, হস্তশিল্প, নানামুখী শিক্ষা বিস্তারমূলক কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে এ শাখা কার্যালয়ে চালু করা হয়েছে। এ শাখা কার্যালয়ের উৎপাদিত ক্ষুদ্র কুটির শিল্পসহ নানা পণ্য সম্ভার প্রদর্শনের কলা কৌশল ও সজ্জা নৈপুণ্য নজর কাড়া। পকেটে টাকা থাকলে কোন পর্যটক ঐ সব পণ্যদ্রব্য ক্রয় থেকে বিরত থাকবে বলে মনে হয় না। সেখানে মহাচার্যের বই বিক্রয় করা হচ্ছে। বিক্রয় করা হচ্ছে নানা ধরণের বুদ্ধের ছোটবড় বুদ্ধমূর্তি ও বুদ্ধ লকেট। রয়েছে চীনের নানা ধরণের চা পাতা বিক্রয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। সেখানে আমাদেরকে দুুপুরের খাবার সরবরাহ করা হল। খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি বক্তৃতা, বিবৃতি এ শাখা কার্যালয় তথা মন্দিরে বর্তমান সময়ে গৃহীত ও বাস্তবায়িত এবং বাস্তবায়নাধীন কার্যাদির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। লাঞ্চের পর সাংহাই নগরীর আরেক পাশে ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে প্রতিষ্ঠিত মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের আরেকটি শাখা কার্যালয়ে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায়- সেখানে মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের যাবতীয় বইয়ের চীনা সংস্করণ ও ইংরেজিতে অনুদিত বইসমূহ মুদ্রিত হয়। সেখানে খুবই উচ্চ শিক্ষিত ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী দু’বোন ঐঁসধহরংঃরপ ইঁফফযরংস চৎড়ঢ়ধমধঃরড়হ এর লক্ষ্যে দীর্ঘ ১১ (এগার) বছর ধরে মহাচার্য শিং ইউনের এযাবৎ মুদ্রিত সকল বই ইংরেজিতে অনুবাদ ও বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে, সম্মেলনে, আলোচনা সভায় মহাচার্য কর্তৃক প্রদত্ত ধর্মভাষণ ও লিখিত বক্তব্যসমূহ সংগ্রহ করে বই, ম্যাগাজিন, কোটেশন আকারে মুদ্রণ করে চীনা সমাজের আনাচে কানাচে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে আসছেন। উচ্চ শিক্ষিত সুন্দরী ও যৌবনবতী হওয়া সত্তে¡ও দু’বোনের কেউ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শনের অনুসারী বৌদ্ধ সমাজে ধর্মীয় ক্ষেত্রে আত্মনিবেদনের অনুষঙ্গে নর-নারীর মধ্য থেকে ভিক্ষু ভিক্ষুনীব্রত গ্রহণ করার ব্যাপারে কোন সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই। মহামানব গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর জীবদ্দর্শায় নারীদেরকে ভিক্ষুনীব্রত গ্রহণ করে মানব জীবনের অসারত্ব অনুধাবন পূর্বক সর্বদুঃখ অন্তসাধনের অবকাশ দিয়েছিলেন। মহাযানী বৌদ্ধ সমাজ এখনও মানবপুত্র বুদ্ধের এ বৈষম্যহীন প্রথাকে শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরে বৌদ্ধিক সমাজ বিনির্মাণে অনন্য সাধারণ অবদান রেকে চলেছেন। মহাচার্য মাস্টার শিং ইউনের প্রতিষ্ঠিত ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ বৌদ্ধ মন্দির থেকে শুরু করে জাপান, তাইওয়ান, আমেরিকা, কানাডা, হংকং, সিঙ্গাপুর ও গণচীনের যতগুলি বৌদ্ধ মন্দির, বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ আমি সশরীরে পরিদর্শন করার বিরল সুযোগ পেয়েছি সবগুলিতে ভিক্ষুদের পাশাপাশি ভিক্ষুনীদের দোর্দন্ড উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। কোন কোন বৌদ্ধ মন্দির ও কলেজে একেবারে সর্ব্বোচ্চ পদে ভিক্ষুনীরা অধিষ্ঠিত থেকে যোগ্যতার সাথে পরিচালনা করার ক্যারিশমা দেখাচ্ছেন। এটা সত্যিই এক বিরল কৃতিত্বের ব্যাপার। কাউশিয়াং এর ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ বৌদ্ধ মন্দিরে মহাচার্যসহ মাত্র ৩/৪ জন ভিক্ষু অবস্থান করেন। অপরদিকে শত শত ভিক্ষুনী ইখওঅ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ইঁফফযরংঃ চৎড়মৎবংং ঝড়পরবঃু ও ইখওঅ ঞ.ঠ কেন্দ্র থেকে শুরু করে তাইওয়ানের দু’টি বিশ^বিদ্যালয়ে তাঁরা সর্ব্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থেকে খুবই সুচারুরূপে পরিচালনা করার কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন। ১৩ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত গণ চীনের অভ্যন্তরে উধ ঔঁব ঞবসঢ়ষব সহ ৯টি নাবিকেন্দ্রে মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ এর শাখা কার্যালয় বা বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছি। সবগুলিতে ভিক্ষুনীরাই শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। পুরুষ ভিক্ষুর দেখা পেয়েছি খুব কম। সাংহাই এর যে কেন্দ্রে মহাচার্যের যাবতীয় বই, ম্যাগাজিন ও কোটেশন নানা ভাষায় অনুবাদসহ মুদ্রনের দায়িত্বে দায়িত্বরত দু’বোনের কথা পূর্বে উল্লেখ করেছিলাম সে কেন্দ্রটিও উচ্চ-শিক্ষিত এক ডজন ভিক্ষুনী কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। মহাযানী হচ্ছে। মহাযানী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অধিকাংশ বৌদ্ধ মন্দির যেহেতু ভিক্ষুনীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত, যেহেতু ভিক্ষুনী সংঘ তথাকার সমাজের সর্বক্ষেত্রে আবালবৃদ্ধ বনিতার কল্যাণে উৎসর্গিত, যেহেতু তাঁরা সমাজ মানসে ত্যাগ, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ঐক্যতা, গভীর ধর্ম বিশ^াস, ধর্র্মীয় মূল্যবোধ, বৈষয়িক বুদ্ধি-বৃত্তি, কঠোর শৃক্সখলাবোধ উৎসর্জনে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জীবনপাত করে চলেছেন সেহেতু ভিক্ষুনী সংঘ মহাযানী বৌদ্ধ সমাজে সর্বত্র সমাদৃত, নন্দিত, পূজিত, সংবর্ধিত শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় পরিপুষ্ট। তাঁরা ত্যাগদীপ্ত কর্ম-ত্যাগদীপ্ত কর্ম-কৃতিত্বের জন্য চিরভা¯^র। একজন ভিক্ষু গৃহস্থ বাড়ির অন্দর মহলে ও মহিলা মহলে যেতে পারেন না। কিন্তু একজন ভিক্ষুনী যেহেতু তিনি একজন নারী সেহেতু তাঁর অন্দরমহলে অথবা মহিলা মহলে গিয়ে বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনের অহিংসার অমিয় বার্তা পৌঁছে দিতে কোনো বাধাঁ নেই। মহামানব গৌতম বুদ্ধ এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নারীদেরকে সংঘে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে বিজ্ঞজনের অভিমত। মহাযানী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অধিকাংশ বৌদ্ধ মন্দির, মন্দির সংলগ্ন বিদ্যালয়সমূহ ভিক্ষুনী সংঘ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিধায় সমাজের আর্ত-পীড়িত, অবহেলিত, জীবন সংগ্রামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ নারী সমাজ ও বিনাদ্বিধায় ভিক্ষুনীদের আশ্রয়ে চলে আসছেন। ভিক্ষুনীদের সংস্পর্শে থেকে উপযুক্ত ট্রেনিং নিয়ে উচ্চতর শিক্ষাদীক্ষায় বিমন্ডিত হয়ে তাঁরা মহাযানী বৌদ্ধ সমাজে অনন্যসাধারণ অবদান রাখার পরম পরাকাষ্টা প্রদর্শন করে চলেছেন। পূর্বোক্ত দু’বোন এখনও রংবস্ত্র ধারণ করেননি। কিন্তু ভিক্ষুনীদের সান্নিধ্যে থেকে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে নিরলসভাবে মহাচার্যের বইসমূহের পঠন, পাঠন, অনুবাদ ও মুদ্রণ কর্মে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ বৌদ্ধ মন্দিরের যে শাখা কার্যালয় বা মন্দিরটিতে পূর্বোক্ত দু’সহোদর বোনের দেখা পেয়েছি সেখানে আমাদেরকে চা-চক্রে আপ্যায়ন করা হ’ল। কেক, কাজু, নানা প্রকার বিস্কুট, চকোলেট, বিন্নিচালের নানা প্রকার পিঠা, বিভিন্ন সুমিষ্ট ফল মূলের অঢেল সমাহার দেখে আমাদের চক্ষু ছানাবড়া। কোনটা রেখে কোনটা খাই ভেবে কুল পাওয়া মুস্কিল। বুফে পদ্ধতিতে যার যেটা ইচ্ছে তা প্লেটে গ্রহণ করে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে খাদ্য গলাদকরণ ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই মনকড়া পদ্ধতি। কিন্তু মধুমেহ ও হাইপারটেনশনের রোগী বিধায় আমার জন্য ঘি, মাখন, মিশ্রিত খাদ্য ও অতিরিক্ত মিষ্টি গ্রহণ সর্বদা পরিত্যাজ্য। আমার দ্বিধাগ্রস্ততা লক্ষ্য করে বলা হল- সেখানকার ফলের জুস সমূহ ঝড়ষরফ ঋৎঁরঃ ঔঁরপব। সেখানে কোনোরকম বাড়তি চিনি বা স্যাকারিণ মেশানো হয়নি। ফলমূল সমূহও প্রিজারভেটিভ মুক্ত। যা হোক। আমাদের চা চক্র চলছে। চা চক্রের পাশাপাশি পারস্পরিক ভাব বিনিময়, অভিজ্ঞতা বিনিময় এ শাখা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিক্ষুনীরা বক্তৃতা বিবৃতিসহ তথায় কর্মরত সকল ভিক্ষুনী ও মহিলা কর্মচারীদেরকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল। পূর্বে উল্লেখিত দু’সহোদর বোন ও দীর্ঘ এগার বছর ধরে এ শাখা কার্যালয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুবাদ কর্ম করে যাওয়ার বিষয়টি ভিক্ষুনীর পরিচয় পর্বে বিস্তারিত উঠে এল। তাঁদের সকলের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল। আমরা প্রেসসহ গোটা লাইব্রেরিটি ঘুরে দেখে সকলেই অভিভূত হয়ে গেলাম। অপরাহৃ ৪ ঘটিকার দিকে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে নির্ধারিত বাস যোগে আবারও আমাদের ছুটে চলা। আধা ঘন্টা চলার পর বাস থামলো। এটি একটি বিরাট বাজার। এখানেও কেনাকাটার জন্য সকলকে দেড় ঘন্টা সময় দেওয়া হলো। আমরা বাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। এতক্ষণে জেনে গেলাম এটি সাংহাইয়ের একটি বিখ্যাত বাজার। বহু দেশী বিদেশী পর্যটক গিজ গিজ করছে এ বাজারে। দাম আকাশচুম্বী। সবুজ চা খাওয়ার জন্য একটা ক্লিয়ার ফ্লা· ছাড়া আমার দ্বারা কোন কিছুই ক্রয় করা সম্ভব হল না। অনেক বিশ^খ্যাত কোম্পানীর বিক্রয় কেন্দ্র তথায় রয়েছে। দূর থেকে চোখ ভরে দেখা ছাড়া আমার আর কোন কাজ ছিল না। দেড় ঘন্টার মধ্যে সকলে বাসে ফিরে আসলে বাস ছেড়ে দিল। একটি সুসজ্জিত রেস্তোরার সম্মুখে বাসটি এসে থামলো। আমরা ডিনারের জন্য রেস্তোরায় ঢুকে পড়লাম। ডিনারের পর সাড়ে সাতটার দিকে সাংহাই অপেরা দেখার জন্য আমাদের বাসটি অপেরা হাইজের দিকে রওয়ানা দিল। সার্বিক প্রস্তুতি দেখে বুঝলাম- ট্যুর গাইড পূর্ব থেকেই আমাদেরকে অপেরা দেখানোর সুবন্দোবস্ত করে রেখেছেন। কারণ শত সহ¯্র মানুষের ভিড়ে অপেরা হাউজের গেইটে পৌঁছানোর সাথে সাথে অপেরা হাউজের অভ্যন্তরে আসন গ্রহণের জন্য আমাদেরকে ¯^াগত জানানো হল এবং একেবারে সম্মুখ সারিতে আমাদের সকলের আসল বিন্যাসের সুবন্দোবস্ত হলো। দেখে আমরা সকলেই উৎফল্ল ও পরিতৃপ্ত। অপেরা হাউজে আমাদের আসনের ঠিক পেছনে বহু ইউরোপীয়ান বা আমেরিকান বিদেশী আসন গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে কেউ কেউ হয়তো নেপাল ঘুরে গেছেন। নেপালের বিখ্যাত শয়ম্ভু চৈত্য পরিদর্শনের সময় হয়তো আমার মতো রংবস্ত্রধারী বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তাঁরা ইংরেজিতেই বাক্যালাপ করছেন। তাঁদের মন্তব্য আমি স্পষ্ট শুনতে ও বুঝতে পারছি। তাঁরা আমার মতো একজন বয়স্ক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে যেীবনবতী অপূর্ব সুন্দরী মহিলাদের সাথে সাংহাই অপেরা হাউজে দেখে মনে হল তাঁরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছেন। তবে আমি একা নই-আমার সাথে দু’জন জাপানী বিক্ষুনীও রয়েছেন। তারা আমার থেকে কোথাও বসার সময় কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেন। ঘরংযরফধ ঝুঁশধ ও ঈযড়ড়হম গধু ঈযরহম সবসময় আমার ডান ও বাম পাশে বসে আমার জিজ্ঞাসা ও ঔৎসুক্য প্রশমন করেন। তাঁরা দু’জনেই বিবাহিতা হলেও অপূর্ব সুন্দরী ও যৌবনবতী। মজার ব্যাপার হলো- অপেরা শুরু হওয়ার পূর্বমুহূর্তে আমাদের বসার আসন সমূহের দশটি সারি আমাদেরকে নিয়ে একপামে সরে গেল। বিরাট একটা আন্ডারগ্রাউন্ড সিঁড়ি দেখা দেখতে পেলাম। সেই সিঁড়ি দিয়ে অপেরার কুশীলবরা মঞ্চে আরোহন করলেন। শূণ্যে ঝুলে ঝুলেও কেউ কেউ মঞ্চে এসে পৌঁছলেন। ভাষা না বুঝার কারণে কোন প্রকার রসা¯^াদন আমার দ্বারা সম্ভব হল না। তবে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে- ঝড়হম উুহধংঃু থেকে শুরু করে ৪টি রাজ বংশের রাজত্বকালের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর উপাখ্যান অপেরার কুশীলবরা নিখুঁতভাবে মঞ্চায়ন করেন। শেষ পর্যায়ে করুণাঘন বুদ্ধের শান্ত সৈম্য মূর্তি প্রর্দশিত হল। বুদ্ধের ধর্ম বিজয়, বুদ্ধের শাসন-সদ্ধর্মের বদান্যতায় রাজাদের হিংসা, হানাহানি, যুদ্ধ বিগ্রহ থেমে যাওয়ার দৃশ্য মঞ্চায়িত হল। প্রজা সাধারণের মধ্যে মৈত্রী, অহিংসা ও ঐক্যবদ্ধ কর্ম-সংস্কৃতির বাতাবরণে সার্বিক উন্নয়নের দৃশ্যাবলীসহ পরম শান্তিময় পরিবেশের দৃশ্য দেখলাম। বহু কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক তথা ত্রিকালদর্শী মহামানবের আবির্ভাবের বিবরণাদি পর্দায় প্রদর্শিত হল। ভাষা না বুঝলেও কুশীলবদের মঞ্চায়ন দক্ষতা, আলোক রশ্মির কারুকার্যময় কেরামতি, শূণ্যমার্গে কোন কোন দৃশ্যাবলীর মঞ্চায়ন আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছে। ভাষা বুঝলে এ মুগ্ধতা আরও শতগুণ বৃদ্ধি পেতো বলে আমার দৃঢ় বিশ^াস। দশটার দিকে শো শেষ হল। আগের নিয়মেই দু’সহ¯্রাধিক দর্শকের ভিড় ঠেলে গাইডের উচ্চে তুলে ধরা পতাকা লক্ষ্য করে আমরা পায়ে পায়ে আমাদের বাসে গিয়ে পৌঁছলাম। সকলে বাসে উঠলে বাস ছেড়ে দিল। ঠিক রাত এগারোটার দিকে সাংহাই এর বহু রাস্তা, সুউচ্চ ভবনের আলোকিত সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমাদের বাসটি ডণঘউঐঅগ এজঅঘউ হোটেল এর সুবিশাল পোর্টিকোতে এসে পৌঁছায়। আমাদের জন্য আগে থেকেই হোটেলের রুম বুক করা ছিল। কাউন্টার থেকে নিজ নিজ নামের বিপরীতে রুমের চাবি প্রদান করা হয়। আমাদের ট্যুরের সকলের জন্য হোটেলে ১৫তম ফ্লোরে রুম বরাদ্দ করা ছিল। রুমে ঢুকে সর্বাগ্রে বাথটারে ইষৎ উষ্ণ পানি ধারণ করে নাক বরাবর আধাঘন্টা ডুবে থেকে সারাদিনের ক্লান্তি অপনোদন করলাম। সারা দিনের ভ্রমণ এমনিতেই শরীর অনেক কøান্ত ছিল। তাই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। আরেকটা দিন শুরু হল। আজ ২০ অক্টোবর। হোটেলের ডাইনিং হলে প্রাতঃরাশ সারার পর সকাল ৯ ঘটিকার দিকে সকলে বাসে আরোহন করলে বাস গন্তব্যের দিকে ছুটে চল্ল। ডণঘউঐঅগ এজঅঘউ হোটেলে দু’রাত্রি অবস্থান করবো বিধায় আমি ভারী লাগেজটি হোটেল কক্ষে রেখে শুধুমাত্র ক্যামেরা ব্যাগটি নিয়ে চলে আসলাম। সর্বপ্রথমে আমাদেরকে তাইওয়ানের ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ বৌদ্ধ মন্দিরের নিয়ন্ত্রাধীনে পরিচালিত আরেকটি শাখা কার্যালয় বা মন্দিরে নেওয়া হলো। এটি চীনের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক রাজধানী সাংহাই নগরীতে মহাচার্য মাস্টার শিং ইউন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত তৃতীয় শাখা কার্যালয় বা মন্দির। তেত্রিশ তলা বিল্ডিং এর ১৬ ও ১৭ তম তলা এ শাখা কার্যালয় বা মন্দিরের জন্য ভাড়া করা হয়েছে। এ শাখা কার্যালয়টিও ভিক্ষুনীদের দ্বারা পরিচালিত। ১৭তম তলাটিতে একটি সুবৃহৎ বুদ্ধমূর্তিসহ বহু ধরণের বহু অবয়বের ও বহু বাহ্যিক বস্ত্রাবরণে অলঙ্কৃত অপূর্ব সুন্দর বুদ্ধমূর্তি বেদীতে রাখা হয়েছে। এখানে বলে রাখা ভালো- মহাযানীরা বহু বুদ্ধ ও বহু বোধিসত্বের উপাসনা করে থাকেন। এ সম্পর্কে উপসংহারে আলোচনার সদিচ্ছা রইল। আমরা বুদ্ধগণের বেদীমূলে প্রার্থনা ও পূজা নিবেদন করলাম। সামর্থ্যানুযায়ী দান বা·ে প্রত্যেকে কিছু দক্ষিণা দিল। অর্ধঘন্টা ব্যাপী চললো এ পূজা ও প্রার্থনানুষ্ঠান। ঝযৎরহব রুমে ঢুকার সময় আমরা কিন্তু’ কেউ জুতা খুলিনি। ভিক্ষুনীরাও জুতা পরেই ঝযৎরহব রুমে হাঁটাহাঁটি করছেন, যাবতীয় আনুষাঙ্গিক কাজ সুসম্পন্ন করছেন। সেই শাখা মন্দিরের প্রধান ভিক্ষুনী আমাদের প্রার্থনানুষ্ঠান পরিচালনা করলেন। প্রার্থনা ও পূজা নিবেদনের পর প্রধান ভিক্ষুনী মন্দিরের নিত্য নৈমিত্তিক কার্যাবলীর বয়ান তুলে ধরেন। এই শাখায়ও মহাচার্যের যাবতীয় বই স্তরে স্তরে সজ্জিত করে রাখা হয়েছে। পাঠ পিপাসুদের জন্য রাখা হয়েছে সুসজ্জিত পাঠকক্ষ। লাইব্রেরির কলেবর, স্তরে স্তরে সুসজ্জিত বই এর সংখ্যা দেখে মনে হলো মহাচার্যের বই ছাড়াও পাঠক পাঠিকার চাহিদা, রুচি ও মর্জি প্রভৃতি অনুষঙ্গ মাথায় রেখে নানা ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, অর্থনীতি, ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রভৃতি নানা ¯^াদের বইও রাখা হয়েছে। পাঠাগারে। আট দশজন তরুণ তরুণীকে নিবিষ্টচিত্তে বইয়ের গভীরে ডুবে থাকতে দেখা গেল। মহাচার্যের এ শাখা কার্যালায়ে আমাদেরকে দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হলো। খাবারের সময় এ শাখা কার্যালয়ের প্রধান ভিক্ষুনী এ শাখা কার্যালয়টি অন্য একটি সুবিস্তৃত জায়গায় প্রধান সড়কের পাশে স্থানান্তরের বিষয়টি জানালেন। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে ভাড়াকৃত ১৬ ও ১৭ তম তলা ছেড়ে দিয়ে এ কার্যালয়টি নিজ¯^ বিল্ডিং এ চলে যাবে। আমাদের দলের ভ্রমণকারীরা ঋড় ছঁধহম ঝযঁহ এর নব নির্মিত বিল্ডিংটি এক নজর ঘুরে দেখার সদিচ্ছা হয়তো পোষণ করেছিলেন বলে মনে হল। আহারের পর আমাদেরকে বিল্ডিংটি দেখানোর জন্য নেওয়া হয়। এটা একটি বিরাট দালান। মনে হল ১৬/১৭ তলা উচ্চতার হবে। বিল্ডিংটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন অভ্যন্তরীণ ডেকোরেশনের কাজ পুরোদমে চলছে। উপরে ওঠার অনুমতি ছিল না বিধায় বিল্ডিংটির চতুর্দিক ঘুরে দেখার পর সাংহাই নগরীর সৌন্দর্য উপভোগ ও হোয়াংহো নদীতে নৌবিহারের লক্ষে নগরীর প্রাণ কেন্দ্রের দিকে রওয়ানা দিলাম। আজ থেকে বেশ ক’বছর আগের কথা। ২০০৭ সালে মহাচীন ডড়ৎষফ ইঁফফযরংঃ ঋড়ৎঁস গঠনের লক্ষে বিশে^র তাবৎ বৌদ্ধ-ধর্ম-দর্শনের পন্ডিতদেরকে সাংহাই নগরীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আদিবাসী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজন অনুল্লেখযোগ্য ভিক্ষু হলেও আমি ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো, ঢাকাস্থ ধর্মরাজিক মহাবিহারের অধ্যক্ষ সর্বজন শ্রদ্বেয় ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথেরোসহ ৭ জন। বৌদ্ধ পন্ডিতের সাথে চীন সরকারের আমন্ত্রিত প্রতিনিধি হিসেবে সর্বপ্রথম মহাচীন দর্শনের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। সে সময় সাংহাই নগরীর নার্ভ সেন্টারে অবস্থিত ‘গ্রান্ডহায়াত’ হোটেলের ৫৮ তলায় দু’রাত্রি থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। এবারেও সেখানে গিয়ে ‘গ্রান্ডহায়াত’ হোটেলটি খুঁজতে থাকি। হোয়াংহো নদীর তীরে নেমে ‘গ্রান্ডহায়াত’ হোটেলের কথা জিজ্ঞাসা করলে আমাদের গাইড হোটেলটি দেখিয়ে দিলেন। দেখা গেল সেই হোটেলের আশেপালে ঐ রকম উচ্চতাকে ছাপিয়ে আরও অন্তত দশ বারোটি স্থাপনা অনন্ত আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছ্ েদূর থেকে ‘গ্রান্ডহায়াত’ হোটেলটিকে চতুপাশর্^স্থ আকাশচুম্বী হোটেল বা স্থাপনা সমূহের ভিড়ে খুবই অপাংক্তেয় মনে হল। ভাবলাম ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল খুব বেশি সময়ের ব্যবধান না। তবু চীনের বদলে যাওয়ার ধরণ অনেক অনেক বেশি। আমরা নৌবিহারের লক্ষ্যে বোটে চড়ে বসলাম। বোট ঘন্টা খানেক নদীর মাঝখান থেকে আমাদেরকে সাংহাই এর সৌন্দর্য দু’চোখ ভরে দেখার অবকাশ দিল। নৌ ভ্রমণের সময় আমার দামী ক্যামেরায় অনেক অনেক ছবি তুললাম। কিন্তু শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে এসে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ধারণকৃত ছবির গুণ বিচার করে দেখা গেল অধিকাংশ ছবিই গুণগত মানের বিচারে খুবই নি¤œ মানের। সাংহাই এর নার্ভ সেন্টার থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচ ঘটিকার দিকে আমরা পরবর্তী গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দিলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে একটি দামী রেস্তোরায় আমাদেরকে ডিনার করানো হল। ডিনারের পর আমরা সাংহাই এর বিখ্যাত সার্কাস দেখার জন্য সার্কাস গ্রাউন্ডের দিকে রওয়ানা দিলাম। সার্কাস গ্রাউন্ডে পৌঁছে দেখা গেল হাজার হাজার দেশী বিদেশী পর্যটক। খোলা মঞ্চে নাচ হচ্ছে, কোথাও কোথাও নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে, কোথাও কোথাও নানা কিসিমের সার্কাস দেখানো হচ্ছে। আমরা প্যান্ডেলের নাতি দূরে দাঁড়িয়ে একটি উপভোগ্য সার্কাস দেখলাম। সার্কাসে ছুরি নিক্ষেপের অভূতপূর্ব কৌশল দেখানো হলো। দেখলাম কালো কাপড়ে চোখ বাধা একজন মানুষ অন্য একজন জীবন্ত মানুষের ডানে বায়ে মাথার উপরে, পায়ের নিচে, দু’পায়ের ফাঁকে, দু’হাতের সন্ধিস্থলের মাঝামাঝিতে না দেখে ছুুরি নিক্ষেপ করেছে। শুধু মাত্র শব্দ শুনে ধারালো ছুরি নিক্ষেপের এরকম দৃশ্য সত্যিই বিরল এবং উপভোগ্য। সার্কাসের প্রধান আকর্ষণ তখনও শুরু হয়নি। আট ঘটিকার দিকে আমরা সার্কাসের প্রধান খেলাটি দেখার লক্ষ্যে বিরাট অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করলাম। আমাদের গাইড বললেন- প্রতিদিন এ অডিটোরিয়ামে কমপক্ষে দশ হাজার লোক সার্কাস দেখতে আসেন। পূর্ব থেকে আমাদের জন্য টিকেট সংগ্রহ করা ছিল বিধায় একদম সামনের দিকে সিট পেতে আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। সামনের দ্বিতীয় সারিতে আমাদের সকলের বসার সিট হয়তো পূর্ব থেকেই বুক করা ছিল। কমপক্ষে তিন সহ¯্র দর্শকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অডিটোরিয়ামে তিল ধারণের জায়গা নেই। এখানেও অনেক অনেক সাদা চামড়ার লোক সার্কাস দেখতে পূর্ব থেকেই আসন গ্রহণ করে অধীর আগ্রহে বসে রয়েছেন। সাড়ে আটটার দিকে শো আরম্ভ হল। সর্বপ্রথম সাইকেল নিয়ে ১৪/১৫ বছর বয়সী ৩০ জনের মতো বালিকার বিস্ময়কর সাইকেল রাইডিং। একটি সাইকেল প্রথমে ৮জন পরে ১২জন পর্যন্ত নানা ভঙ্গিমায় চড়তে দেখা গেল। দর্শকরা চরম উত্তেজনাকর ও অভাবিত পূর্ব মুহূর্তে কানের পর্দাফাটানো হাত তালির মধ্য দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। এরপর শুরু ৫ জন মেয়ের নানা ভঙ্গিমায় শারীরিক কসরৎ। মঙ্গোলিয়ান মেয়েদের এরূপ শারীরিক কসরৎ মাঝে মাঝে টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে দেখানো হয়। মঙ্গোলিয়ান মেয়েদের শারীরিক কসরতের সাথে সাংহাই সার্কাসের ৫ জন মেয়ের শারীরিক কসরতের কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হল না। একজন মেয়ের শরীরের ওপর অপর চার জন মেয়ের একজনের উপর আরেকজনের অতঃপর আরেকজনের, অতঃপর আরেকজনের সম্পূর্ণ পাঁচ ভঙ্গিমায় অধিষ্ঠান। পুরো সার্কাসটি দেখে মনে হলো সার্কাসের মেয়েগুলোর শরীরের কোথাও যেন এতটুকু হাড় নেই। সার্কাসের এ পর্যায়ে শুরু হলে একটি বিরাটকায় খাঁচার মধ্যে মোটর সাইকেল চালানোর কসরৎ। প্রথমে একজন, তারপর দু’জন, তারপর তিনজন, এই করতে করতে ৮ জন লোক সেই খাঁচার মধ্যে নানা ভঙ্গিমায় নানা আঙ্গিকে দিব্যি ¯^াচ্ছন্দ্যময় গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর কসরৎ দেখালো। পরে একজন একজন করে মোটর সাইকেল চালাতে চালাতে খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসলো কোনো রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই। পিরামিড গঠন, রশির সাহায্যে শূণ্যে ৮ জন লোকের পিলে চমকানো শারীরিক কসরৎ, ছাদ থেকে বিদ্যুৎ গতিতে নেমে আসা ছিল সত্যিই চোখ ধাঁধাঁনো বলতে হয়। দু’টি দু’রংয়ের থান কাপড়ের প্রান্ত ধরে, পায়ে পেচিয়ে, হাতে পেচিয়ে দু’জন নরনারীর বর্ণাঢ্য শারীরিক নৈপুণ্য প্রদর্শন ছিল আরও রেশি চিত্তাকর্ষক। এছাড়াও সার্কাসের আরও বেশ ক’টি আইটেম দেখলাম যার সবগুলো এক মনে দেখার মতো। প্রদর্শিত গা হিম করা শারীরিক কসরৎ আমাদেরকে যারপরনাই বিস্ময়াবিষ্ট করেছে বললে কম বলা হবে। রাত সাড়ে দশটার দিকে শো শেষ হ’ল। যথারীতি হোটেলে ফিরে এসে পূর্ববৎ ক্লান্তি অপনোদনের পর ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম। নির্ধারিত সফর সূচি সাঙ্গ হল। আজ ২১ অক্টোবর। আজ কোথাও ভ্রমণের তাড়া ছিল না। সবাই বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সর্বাগ্রে ৫ জন ব্রাজিলিয়ান বিদায় নিলেন। তাঁদের আকাশ যান ১২ টার দিকে সাংহাই বিমান বন্দর ছাড়বে। তারপর বিদায় নিল জাপানের নাগোয়া ও ফুকুওকার ১০ জন জাপানি নাগরিক। যে দু’জন জাপানি মহিলা ১৬ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আমার সুখ স¦াচ্ছন্দ্য, আনন্দ ও বেদনায় পরম মমতাময়ীর ভূমিকায় আমাকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন, বিদেশ বিভুঁইয়ে আমাকে মাতৃত্বের আ¯^াদ দিয়েছিলেন তাঁদেরকে বিদায় দেওয়ার লক্ষে হোটেল লাউঞ্জে নেমে আসলাম। আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে তাঁদের চোখের কোথায় অশ্রæবিন্দু দেখা গেল। আমার ও অশ্রæ সংবরণ করা অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। যেহেতু আমার নির্ধারিত ঋষরমযঃ ঝবযবফঁষব ২২ অক্টোবর রাত ১০ ঘটিকার দিকে, সুতরাং ডণঅঘউঐঅগ এজঅঘউ হোটেলে আমাকে আরও একরাত কাটাতে হবে। হোটেলে আমার প্রাতঃরাশ, লাঞ্চ ও ডিনারের ব্যাপারে তদারকী ও পরিবেশনের জন্য আমার মাতৃস্থানীয়া জাপানের ঘওঝঐওউঅ ঝণটকঅ হোটেলের ডাইনিয় হলের একজন মহিলা কর্মচারীকে দায়িত্ব দিয়ে তারপর আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। আমি বুঝলাম মানুষের জন্য অন্তরের ভেতরে অশ্রæ ক্ষরণ স্থান কাল পাত্র ভেদে হয় না। এসবই মমতার সুতোয় বাধা চলতে ফিরতে সবসময় অন্য সব কিছু ছাপিয়ে মানুষের মানবিকতাটুকু আমাকে আপনাকে জয় করে নেয়। বিমুগ্ধ ব্যবহারে এই জাপানি ভদ্র মহিলাদ্বয় সেই কথাগুলোই প্রমাণ করে গেলো। তাঁদেরকে বিদায় দিয়ে হোটেল কক্ষে ফিরে এলাম। হোটেলের পাশ দিয়ে একটি বৃহৎ নদী বয়ে চলেছে। অসংখ্য ছোট বড় স্টিমার, নৌকা সেই নদী দিয়ে অনবরত আসা যাওয়া করছে। হোটেল কক্ষে পূর্বমুখী জানালার পর্দাটি পুরোপুরি খুলে দিয়ে নদী ও প্রধান রাস্তার অসংখ্য যন্ত্রযানের অনবরত যাওয়া-আসা ও দু’চোখ ভরে দেখাও সাংহাই এর আকাশ ও মহানগরীর সৌন্দর্য উপভোগ করা ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই। একদম অখন্ড অবসর। গোটা দিন কিভাবে কাটাবো তাই নিয়ে ভাবছি। ২২ অক্টোবর হোটেলের ডাইনিং হলে প্রাতঃরাশের পর কক্ষে ফিরে এসেই কক্ষে টেলিফোনটি বেজে উঠলো। রিসিভার তুলতেই আমাদের ট্যুর বাসের কোম্পানী গৎ. ডঅঘএ জানালেন- তিনি দুপুর ১২টার দিকে এসে আমাকে পুরো সাংহাই নগরী আবারও ঘুরিয়ে দেখাবেন। গৎ. ডঅঘএ হোটেলে এসে পৌঁছলে সাড়ে বারোটার দিকে আমরা হোটেলের ডাইনিং হলে লাঞ্চ করতে গেলাম। দুপুর ২ঘটিকার দিকে হোটেল থেকে ঈযবপশ ড়ঁঃ করে লাগেজ সমূহ লাউঞ্জের স্টোর কিপারের হাতে জমা দিয়ে দু’জনে একটি প্রাইভেটকার যোগে বেরিয়ে পড়লাম। হোয়াংহো নদীর পাড়ে যেখানে সাংহাই ঞঠ টাওয়ারটি রয়েছে সেখানে প্রাইভেট কারটি ছেড়ে দিলাম। হোয়াংহো নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নানা স্থাপনার বহু ছবি ক্যামেরায় ধারণ করলাম। একটি বিরাট সুপার শপিং মলে ডঅঘএ আমাকে নিয়ে গেলেন। শপিং মলের সার্বিক ডেকোরেশন, বিশ^খ্যাত কোম্পানি সমূহের চোখ বাধাঁনো পণ্য সম্ভারের বিপুল সমারোহ আমার লোভ সহগত চিত্তকে বারংবার উস্কে দিচ্ছে। মোবাইলের দোকানে সামসাং ব্রান্ডের এধষধীু ৮ টাইপের একটি মোবাইল কিনতে মন চাইল। দাম বললো ৬৫০ ডলার। আমাদের দেশের টাকাও ডলারের বিনিময় হারের হিসাব কষে কোনরকমে মনের অবদমিত ইচ্ছার রশিতে লাগাম টেনে দোকান থেকে বেরিয়ে আসলাম। এরূপ সুদৃশ্য মোবাইলের দোকানে আর দ্বিতীয়বার ঢুকিনি। সুপার শপিংমল ঘুরতে ঘুরতে সাড়ে পাঁচটা বেজে গেলো। আমি সাংহাই বিমান বন্দরের ২নং টার্মিনালে একটু আগে পৌঁছার ব্যাপারে ডঅঘএ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, হোটেল থেকে রাত ৮টায় রওয়ানা দিলেও ১০ মিনিটেই আমরা ২নং টার্মিনালে গিয়ে পেীঁছবো। গৎ. ডঅঘএ জানালেন আমাকে তিনি সুপার এ·প্রেস ট্রেনে চড়িয়ে সাংহাই বিমান বন্দরের ২নং টার্মিনালে নিয়ে যাবেন। অনেক দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক স্থাপনা, সাংহাই শহরের রাত্রীকালীন সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে রাত সাড়ে সাত ঘটিকার দিকে আমরা হোটেলে এসে পৌঁছলাম। হোটেলের ডাইনিং হলে ডিনার সেরে ঠিক আট ঘটিকার সময় সুপার এ·প্রেস ট্রেনের টার্মিনালের অভিমুখে প্রাইভেই কারযোগে রওয়ানা হই। মিনিট দশেকের মধ্যে সুপার এ·প্রেস ট্রেনের টার্মিনালে এসে পৌঁছলাম। ডঅঘএ এবং তাঁর সহধর্মিনীর সুপার এ·প্রেস ট্রেনের মাসিক অগ্রীম টিকেট করা ছিল বিধায় তাই দিয়ে আমরা দু’জনেই টার্মিনালের অভ্যন্তরে ঢুকে যেখান থেকে ট্রেন ছাড়ে সেখানে গিয়ে অবস্থান নেই। দু’তিন মিনিটের মধ্যে ট্রেন এসে দাঁড়াল এবং উভয়ে ট্রেনে উঠে বসলাম। ট্রেনে উঠার অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিল। গৎ. ডঅঘএ জানালেন- ট্রেনটি নাকি প্রতি ঘন্টায় ৪৪০ কিলোমিটার বেগে চলে। প্রাইভেট গাড়িতে নাকি সাংহাই বিমান বন্দরের ২নং টার্মিনালের যেতে নির্ঘাত এক ঘন্টা সময় নিতো। কিন্তু আমরা এ সুপার এ·প্রেস ট্রেনে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই ২নং টার্মিনালের উবঢ়ধৎঃঁৎব লাউঞ্জে এসে পৌঁছি। গৎ. ডঅঘএ গর্বের সাথে জানালেন জাপান, ফ্রান্স, জার্মানিতে এরূপ সুপার ফাস্ট ট্রেন অদ্যাবধি চালু করতে পারেনি। ঐসব দেশের ইঞ্জিনিয়াররা নাকি চীনের এ প্রযুক্তি দক্ষতার পাঠ নিতে আসছেন প্রতিনিয়ত। গৎ. ডঅঘএ এয়ার ইন্ডিয়ার কাউন্টারে আমার লাগেজ জমা করণ, লাগেজ ট্যাগ গ্রহণ ও বোর্ডিং কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত সঙ্গে সঙ্গে রইলেন। সবকিছু সম্পন্ন হলে একেবারে উবঢ়ধৎঃঁৎব লাউঞ্জের আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দরোজার গোড়ায় পৌঁছিয়ে দিয়ে আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। বিদায় লগ্নে আমাদের উভয়ের চোখ অশ্রæসজল হয়ে ওঠলো। আমি হাত নাড়তে নাড়তে ইমিগ্রেশন কাউন্টারের অভ্যন্তরে চলে গেলাম। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিতে আমার বসার সিটটি বাণিজ্যিক ক্লাশের হলেও সুপ্রশস্ত। সিটের উপর হাঁটু মুড়ে বসা যায় নির্বিঘেœ। তিনজনের বসার সিটে আমি একা। আহা কি আনন্দ! প্রত্যেকটি আসনের সম্মুখে গান শোনা ও ছবি দেখার টিভি স্ক্রিন রয়েছে। গান শোনা বা ছবি দেখা আমার পছন্দ হল না। আমি আমার টিভি স্ক্রিনে বিমানটি কোন সময় কোন জায়গা ও দেশের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে তা সেট করে রাখলাম। ছাড়ার সময় দেখা গেল আমরা সাংহাই থেকে নয়াদিল্লী পর্যন্ত এভারেস্টের উপর দিয়ে সরল রেখায় উড়ে চলে যাবো। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল আমাদের বহনকারী বিমানটি চীনের কুনমিং, মিয়ানমারের ইয়াংগুন, চট্টগ্রাম ও ঢাকার উপর দিয়ে কলকাতা, ভূবনেশ^র, প্রভৃতি ছুঁয়ে ছুঁয়ে সাড়ে ছয় ঘন্টার পর নয়াদিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে নামলো। বাংলাদেশের ঢাকার উপর দিয়ে বিমানটি যাবার সময় ইচ্ছে হলো- আহা, আমি যদি ঢাকায় নেমে যেতে পারতাম। আমি একজন সাধারণ বৌদ্ধ ভিক্ষ্ ুআর দশজন মানুষের মতোই আমার দেখা ও শেখা। তবে ভিন্নতা এই আমি মহামানব বুদ্ধের প্রদর্শিত সত্যের একজন অনুসারী। সেই সত্যের আলোয় তিল তিল করে ভিক্ষু জীবনের গড়ে ওঠা। হয়ত এই হেতু আর সব মানুষের ভ্রমন কাহিনীর মতো এই ভ্রমণ কাহিনীটি হয়েও হতে পারলো না। হতে পারে আরও বেশি চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষণীয় অথবা একটু নিরস। আর যাই হোক আমি আমার প্রতিটি পদক্ষেপ যা উপভোগ আর যা সত্য তা গ্রহণ করেছি। এই ভ্রমণ আমাকে শিখিয়েছে মানবতাবোধ। সবকিছু ছাড়িয়ে কিভাবে আপনাকে আমি অনেকের মাঝে অনেক অনেক বেশি আপন করে নিতে সক্ষম অর্জন করতে হয়। ঢাকা থেকেই সুদূর সাংহাই গমনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিশ^ বৌদ্ধ সংঘের সম্মেলনে যোগদান এবং মহামানব বুদ্ধের পবিত্রতম তীর্থভূমি। তিনটি ভ্রমণ দলের মধ্যে আমার পছন্দ ছিল ‘সি’ দল। সেসব অচেনা পথ আর ¯^প্নীল স্থাপনাগুলোর মতোই আমার সাথের মানুষগুলো ছিল অচেনা। অথচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা অনেক আপন হয়েছিলাম অনেকটা মানবিক মূল্যবোধের তাগিদে মানবপুত্র বুদ্ধের বদান্যতায়। উধ লঁব ঞবসঢ়ষব এ সম্মেলন পরিসমাপ্তির পর যে ১৬ জন প্রতিনিধি নিয়ে ভ্রমণের ‘সি’ দল গঠিত হয়েছিল- তাঁরা হলেন-
১. গধংঃবৎ ঔঁব ঝযবহম- ঘধমড়ুধ, ঔধঢ়ধহ
২. ঘরংযরফধ ঝুঁশধ- ঘধমড়ুধ, ঔধঢ়ধহ
৩. ঈযড়ড়হম গধু ঈযরহম- ঘধমড়ুধ, ঔধঢ়ধহ
৪. খরঁ তযবহ- ঘধমড়ুধ, ঔধঢ়ধহ
৫. গধ ণরহম- ঘধমড়ুধ, ঔধঢ়ধহ
৬. ঐঁধহম গবর ঈযঁ- ঘধমড়ুধ, ঔধঢ়ধহ
৭. এধড় ঢরধঁ ঔঁধহ- ঘধমড়ুধ, ঔধঢ়ধহ
৮. গধংঃবৎ ঔঁব অহ- ঋঁশঁড়শধ, ঔধঢ়ধহ
৯. ডধহম ঋবহম ঢরধ- ঋঁশঁড়শধ, ঔধঢ়ধহ
১০. ঔরধ গরহ- ইৎধুরষ
১১. ঔড়ৎমব ঈযবৎহ- ইৎধুরষ
১২. গধারহধ ডঁ- ইৎধুরষ
১৩. ঝযঁ খর ঈযবহ- ইৎধুরষ
১৪. ঝঃবষধ ঐঁধহম- ইৎধুরষ
১৫. অহধ খড়- ইৎধুরষ
১৬. ঠবহ. চৎধলহধহধহফধ গধযধঃযবৎধ- ইধহমষধফবংয